শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত

এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বহু পরিবার

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩, ০৭:৩০

কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিনসহ উপকুলে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতের ২০ দিন পার হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এই সাইক্লোনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন এখনো সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

উপকূল অতিক্রম কালে টেকনাফের সেন্টমার্টিন ও শাহপরীরদ্বীপে নিজের প্রভাবটা বেশি ফেলেছিল মোখা। সেন্টমার্টিনে ২ হাজারের অধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লবণাক্ত পানির প্লাবনে নলকূপ থেকে উঠছে লবণমিশ্রিত পানি। ফলে সুপেয় পানির সংকটে ভুগছেন দ্বীপবাসী। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কিছু পরিবার টিন ও নগদ টাকা ত্রাণ পেলেও এখনো ঘরবাড়ি দাঁড় করাতে পারেনি বহু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। স্থল থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় এখানে কাঁচাবাড়ি নির্মাণসামগ্রী ও লেবারের দামও আকাশ ছোঁয়া। ফলে, প্রাপ্ত টিন ও নগদ টাকায় চেষ্টা করেও মাথা গোঁজার ঠাঁই আজো করতে পারেনি তারা।

অপরদিকে, শাহ পরীরদ্বীপ ও হোয়াইক্যং এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি, পানের বরজ, ফসলি খেত সবখানে এখনো দুরাবস্থা। এসবে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষতি পুরাপুরি পুষিয়ে উঠতে পারেননি ভুক্তভোগীরা। সেন্টমার্টিনের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা জেলে ইমাম হোসাইন (৩০) বলেন, মাছ শিকারই আমার সংসার চালানোর মূল। সাগরের ওপর নির্ভর করে ঘর চলে, সন্তানদের পড়াশোনা করায়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখা সব ওলটপালট করে দিয়েছে। বিধ্বস্ত হয়ে গেছে আমার ঘরটি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই বান্ডেল টিন ও নগদ ৬ হাজার টাকাসহ খাবার দিয়েছে। কিন্তু বাড়িটি এখনো তুলতে পারিনি। টিন লাগাতে হলে গাছ ও অন্য সরঞ্জাম দরকার। দরকার রয়েছে মিস্ত্রির। যা খরচ পেয়েছি তা দিয়ে কোনোটাই হচ্ছে না। তাই বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছি।

সেন্টমার্টিন দক্ষিণ পাড়া কাড়াবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ বলেন, তালিকা করেছে শুনলাম তবে কবে সহযোগিতা পাব জানি না। জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়রা শুরুতেই ত্রাণ পেয়েছে। অল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও অনেকে সহযোগিতা পেয়েছেন। কিন্তু আমার মতো অনেকের ভাগ্যে এখনো জুটেনি।

শুধু আব্দুল্লাহ নয়, সরকারি সহযোগিতা পাননি বলে দাবি করেছেন দক্ষিণপাড়া পোঁচ কাড়াবনিয়ার বাসিন্দা ফায়সাল, নুরুল ইসলাম কালো, রফিক, রশিদ আহমদ, মুহাম্মদ আলম এবং আব্দুস সালামসহ অনেকে। তবে- উপজেলা প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে বলা হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সহযোগিতা পৌঁছানো হয়েছে। সেন্টমার্টিন দক্ষিণপাড়ার নুরুল ইসলাম (কালু মিয়া) বলেন, সরকারি কোনো সাহায্য এখনো পাইনি। শুনেছি পাশের গ্রামের অনেকে টিন ও নগদ টাকা পেয়েছে। আমিও পাবো বলে আশ্বাস পেয়েছি। কুনারপাড়ার রফিক আহমদ বলেন, আমি ৬ হাজার টাকা ও দুই বান টিন পেয়েছি। কিন্তু এই টাকায় মিস্ত্রির উচ্চ মজুরি দিয়ে ঘর দাঁড় করানো অসম্ভব। তাই বিধ্বস্ত ঘরেই কষ্ট করে থাকছি। তথ্য মতে, গত ১৪ মে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে সেন্টমার্টিনে প্রায় ২ হাজারের মতো বসতবাড়ি নষ্ট হয়। ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে জনপ্রতিনিধিদের স্বজনপ্রীতির কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রাণ পেতে বিলম্ব হয়েছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। ক্ষতিগ্রস্তরা টিন ও টাকাসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ পেলেও ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ায় ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন দরকার। আমাদের তরফ থেকে কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি করা হয়নি। উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করছে, শিগগিরই আরও সহযোগিতা আসবে বলে জেনেছি।

টেকনাফের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, সেন্টমার্টিনে ক্ষতিগ্রস্তদের আমরা তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছি। যাদের ঘর একেবারে বিধ্বস্ত হয়েছে তাদের এ-ক্যাটাগরি, এর চেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্তরা বি-ক্যাটাগরি এবং বাকিদের সি-ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। সেই মতে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ পৌঁছে দেয় হয়েছে। বিধ্বস্ত বাড়ির মালিককে ৬ হাজার নগদ টাকা এবং দুই বান টিন দেওয়া হয়েছে।  

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে আমার নির্বাচনি এলাকায় ১ হাজারের ওপরে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এলাকার জন্য এক মে. টনের মতো ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ পেয়েছি। ক্ষতির তুলনায় ত্রাণের পরিমাণ অতি অল্প। 

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, মোখায় ক্ষতিগ্রস্তদের টিন-টাকা-চাল-ডালসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। তালিকা রয়েছে, সেই মতে সবাই সহায়তার আওতায় আসছেন।

ইত্তেফাক/এমএএম