শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ঘূর্ণিঝড় আইলার ১৪ বছর

দাকোপে এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি ৬৮৫ পরিবার

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩, ০৭:০০

গত ২৫ মে, মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আইলার ১৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু খুলনার দাকোপে আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত দুটি ইউনিয়নের ৬৮৫টি পরিবার এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি। আইলায় তাদের ভিটেবাড়ি বিলীন হওয়া এবং আর কোনো জায়গা জমি না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে তারা পুরোনো ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ওপর ঝুপড়ি এবং নদীর তীরে টংঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জানা গেছে, ২০০৯ সালের এই দিনে সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকা দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন জনপদে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। নিমিষেই লণ্ডভণ্ড করে দেয় উপজেলার তিনটি পোল্ডার। নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পায় ৮/১০ ফুটেরও বেশি। পানির তোড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় কামারখোলা ও সুতারখালী দুটি ইউনিয়ন। প্রাণ হারান ১৬জন। নিখোঁজ হন ৭জন ও আহত হন ১১জন। গৃহহীন হাজারো পরিবারের ঠাঁই হয় ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ওপর।

আইলার পর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ক্লোজার আটকিয়ে দুর্গত এলাকাকে ২০১০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পানিমুক্ত ঘোষণা করা হয়। অধিকাংশ পরিবার ঘরে ফিরলেও নদীভাঙনে ভিটেহারা ভূমিহীন অনেক পরিবার ফিরতে পারেনি। তখন সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তাই ছিল তাদের বেঁচে থাকার ভরসা। গত ১৪ বছরে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেছে সব ধরনের সহায়তা। কিন্তু সেখানকার জনসাধারণ এখন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। ঐ এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস নদী থেকে চিংড়ি পোনা ও বনজ সম্পদ আহরণ। বর্তমানে পোনা আহরণ নিষিদ্ধ। আর বনজ সম্পদ আহরণ অনেকাংশে কমে এসেছে। এতে কর্মহীন মানুষ জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন শহরে শ্রম বিক্রি করছেন।

কালাবগি এলাকার আজিজ মল্লিক ও দীপক মণ্ডল জানান, আইলায় ভিটেবাড়ি বিলীন হওয়ার পর তাদের আর কোনো জমি নেই। তাই এখনো তারা ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ওপর পরিবার-পরিজন নিয়ে বাস করছেন। সরকার পুনর্বাসন না দিলে কোনো দিন তাদের ঘরে ফেরা হবে না।

সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০০ পরিবারের জায়গা জমি না থাকায় এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি। তারা পুরোনো ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ওপর মানবেতর জীবন যাপন করছে। সেখানে খাওয়ার পানিরও তীব্র সংকট রয়েছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে পুকুরের অনিরাপদ পানি পান করে থাকে। কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মণ্ডল জানান, আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৮৫ পরিবার এখনো পুরোনো ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ওপর বাস করছে। সরকারি খাস জায়গায় তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শেখ আব্দুল কাদের বলেন, আইলা পরবর্তী যে সব লোক ওয়াপদা বেড়িবাঁধের ওপর বাস করত, তাদের অনেককেই সরকারি মুজিববর্ষের ঘরসহ আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। যারা বাকি আছেন, তাদেরও পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/এমএএম