প্রস্তাবিত বাজেটে সংস্কৃতি খাতে নূন্যতম এক শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার দাবিতে সমাবেশ করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এতে সভাপতিত্ব করেন জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মো. আহ্কাম উল্লাহ্।
শনিবার (৩ জুন) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশ অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ফেডারেশনসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ কম রাখায় প্রতিবাদ জানিয়ে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মো. আহ্কাম উল্লাহ্ বলেন, বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের বাজেটও দেশের সংস্কৃতিকর্মীদের হতাশ করেছে। একটা সমাজ টিকে থাকে সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে। দীর্ঘদিন ধরে দেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নানাভাবে তারা এদেশে মৌলবাদী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে। এসব অপতৎপরতা রোধ এবং সামাজিক সংকট মোকাবিলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সংস্কৃতি চর্চা।
তিনি বলেন, সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংস্কৃতি চর্চার জন্য মুক্তমঞ্চ নির্মাণ করা দরকার। বিগত বছরে পরিকল্পনা থাকলেও টাকার অভাবে সেটি করা যায়নি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে সে দায় নিয়ে সাংস্কৃতিক খাতে বরাদ্দ ব্যয়ে ফেডারেশনসমূহ ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে যুক্ত করতে হবে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনার সঙ্গে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে যুক্ত করার দাবি জানান মো. আহ্কাম উল্লাহ্।
তিনি বলেন, শিক্ষা কার্যক্রমে সংস্কৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। প্রত্যেক জেলায় চারুকলা প্রদর্শনীর জন্য আর্ট গ্যালারি, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর জন্য মিনি অডিটোরিরাম নির্মাণ করতে হবে। সেটি করা না গেলে সারাদেশে সাংস্কৃতিক চর্চা ব্যাহত হবে। তাই জাতীয় বাজেটে নূন্যতম এক শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে।
মো. আহ্কাম উল্লাহ্ শিক্ষা, অনুৎপাদনশীল উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দের ক্ষেত্রগুলিতে সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্র নির্মাণের করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, আমরা ন্যায়ভিত্তিক বিজ্ঞানমনষ্ক অসাম্প্রদায়িক একটি প্রজন্ম তৈরি করতে চাই। যে প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করবে। সে কারণে আমরা মনে করি শিক্ষা এবং সংস্কৃতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সংস্কৃতি সবসময় অবহেলিত হয়ে আসছে।
তিনি বলেন, আমরা মুখে সংস্কৃতির গুরুত্বের কথা বলি। যখনই জাতির কোনো সংকট দেখা দেয়, তখনই সংস্কৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করি। কিন্তু জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতি খাতটি সবসময় অবহেলিত থাকে। এবারও তাই হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তিটা হলো সংস্কৃতির ওপর দাঁড়িয়ে, কাঠামোটা রাজনৈতিক। আমরা বলেছি যে জাতীয় বাজেটের নূন্যতম এক শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হোক।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকালে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। আওয়ামী লীগের আগের স্লোগান ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে এক ধাপ এগিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে ৬৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৬৩৭ কোটি টাকা। ফলে গত অর্থবছরের তুলনায় এই খাতে ৬২ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এবারের বাজেটে।