মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৭ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

হজযাত্রীদের ভিসা প্রক্রিয়ায় গাফিলতি

নির্দেশনা না মানায় ৯০ বেসরকারি হজ এজেন্সিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের শোকজ

আপডেট : ০৪ জুন ২০২৩, ২৩:৩৬

নির্দেশ দেওয়ার পরও তিন দিনের মধ্যে হজযাত্রীদের ভিসা প্রক্রিয়া শুরু না করায় ৯০টি বেসরকারি হজ এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। রোববার (৪ জুন) ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভায় এসব এজেন্সিকে শোকজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে হজ শাখা থেকে তাদের চিঠি দেওয়া হয়। আগামী তিন দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, যেহেতু আপনারা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ পরিচালনাকারী এজেন্সির স্বত্বাধিকারী/ব্যবস্থাপনা পরিচালক/ অংশীদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং যেহেতু আপনারা হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১ এর ০৯ ধারায় বর্ণিত নিবন্ধনের শর্তসমূহ পালনে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ; ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গত ৩০ মে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে তিন দিনের মধ্যে হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল কিন্তু অদ্যাবধি আপনাদের হজ এজেন্সি নিবন্ধিত হজযাত্রীদের ভিসা ইস্যু করেনি, যা সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় অসহযোগিতার শামিল। এ ধরনের অব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং সরকারের হজ ব্যবস্থাপনা-সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে যা হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন ২০২১-এর পরিপন্থি। তাই আজ ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাদের হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১ এর ১৩ ধারা অনুযায়ী কেন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার জবাব আগামী ৩ (তিন) দিনের মধ্যে এ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। 

এর আগে গত ৩১ মে মন্ত্রণালয়ের আরেক চিঠিতেও এ ব্যাপারে উদ্বেগ জানানো হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, ‘অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে জানানো যাচ্ছে যে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের ভিসা শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বেসরকারি এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে হজযাত্রীদের ভিসা করার হার ৫১ দশমিক ১ শতাংশ।’

ভিসার হার কম হওয়ায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, রাজকীয় সৌদি দূতাবাস ও হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে দ্রুততম সময়ে হজযাত্রীদের জন্য ভিসা করতে বার বার তাগিদ দিয়েছে। সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তওফিক আল-রাবিয়াহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করার জন্য ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানকে বার্তা পাঠালে হজ এজেন্সিগুলোকে দ্রুত হজযাত্রীদের ভিসা করানোর জন্য তাগিদ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া, মোয়াল্লেমসহ সৌদি আরবের দেওয়া বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে না পারায় এখনো ভিসা পাননি ৪৪ হাজার ২৬৮ হজযাত্রী। ভিসা না পাওয়া সকল হজযাত্রী বেসরকারি হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজে যাবেন।

ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে হজ এজেন্সির জন্য সৌদি আরবের কিছু শর্ত আছে। এর মধ্যে রয়েছে– সৌদি আরবে হজযাত্রীদের জন্য বাড়ি ভাড়া, ফ্লাইটের টিকিট, প্রবেশ ও বের হওয়ার রুট এবং আসা-যাওয়ার তারিখ নিশ্চিত করা। তবেই সৌদি দূতাবাস ভিসা দেয়। ভিসা না পাওয়ার জন্য বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর গাফিলতি দায়ী বলে অভিযোগ রয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজযাত্রীদের ভিসায় ধীরগতির কারণে হজ ফ্লাইট নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রায়ই খালি সিট নিয়ে ছাড়তে হচ্ছে বিমানের ফ্লাইট। হজযাত্রী সংকটে এরই মধ্যে বাতিল হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট। ফলে শেষ মুহূর্তে হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে চাপ বাড়বে। এতে শেষ সময়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারেন অনেক হজযাত্রী। এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও।

এদিকে বিমানের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ১৯ দিনে ৭৯ হাজার ১৪৭ জন হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পৌঁছাতে হবে। ২২ জুন ঢাকা থেকে হজযাত্রার শেষ ফ্লাইট ছেড়ে যাবে।

 

ইত্তেফাক/ইআ