পিএসজি থেকে বিদায়ের ঘোষণার পর ফুটবল দুনিয়ায় একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল—কোথায় যাবেন লিওনেল মেসি? আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে দলে টানার দৌড়ে নেমেছিল তিনটি ক্লাব, বার্সেলোনা, সৌদি আরবের আল হিলাল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) দল ইন্টার মায়ামি। এর মধ্যে বার্সেলোনা মেসির ভালোবাসা, তার আপন ঘর। সেই ভালোবাসার দাবি নিয়েই ‘ঘরের ছেলেকে আবার ঘরে’ তুলতে চেয়েছিল বার্সা। সৌদি আরবের আল হিলাল মেসিকে ‘হ্যাঁ’ বলাতে চেয়েছিল টাকার বস্তা দিয়ে।
কিন্তু এই দুই ক্লাবকেই হতাশ করে মেসি বেছে নিয়েছেন ইন্টার মায়ামিকে। এখনো পর্যন্ত চুক্তি স্বাক্ষর না হলেও সবকিছুই চূড়ান্ত-ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ডেভিড বেকহামের ক্লাব ইন্টার মায়ামিই হতে যাচ্ছে মেসির ঠিকানা। প্রশ্ন হলো, ইন্টার মায়ামি কীভাবে এই অসম্ভব সম্ভব করে ফেলল? মূল ক্রেতা হিসেবে ইন্টার মায়ামি তো ভূমিকা রেখেছেই, এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে তাদের হয়ে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে আরও তিনটি পক্ষ। সেই তিন পক্ষ হলো অ্যাডিডাস, অ্যাপল ও এমএলএস। মানে ক্লাব ইন্টার মায়ামিসহ চার পক্ষ মিলে দেন-দরবার করে রেকর্ড সাত বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসিকে ‘হ্যাঁ’ বলিয়েছে!
নিজেদের লিগে নিতে এমএলএস কর্তৃপক্ষও খুব করে চাইছিল মেসিকে ইন্টার মায়ামি কিনুক। তাই ইন্টার মায়ামির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এমএলএসের কর্তারাও মেসি, তার বাবা ও এজেন্ট হোর্হে মেসির সঙ্গে গোপনে দেন-দরবার চালিয়ে গেছেন। তাদের হয়ে অ্যাডিডাস ও অ্যাপলও সমানতালে যোগাযোগ, আলোচনা চালিয়ে গেছে।
জার্মানি ভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ক্রীড়া সামগ্রী প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাডিডাসের সঙ্গে মেসির চুক্তি আছে সেই ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই। এখনো সেই চুক্তি বজায় আছে। এই অ্যাডিডাসই আবার এমএলএসের স্পন্সর। শুধু তাই লিগ কর্তৃপক্ষ নয়, এমএলএসের ২৯টি দলেরই সব ক্রীড়া পোশাক সরবরাহ করে অ্যাডিডাস। ১৯৯৬ সালে এমএলএসের যাত্রার শুরু থেকেই স্পন্সর করে আসছে অ্যাডিডাস। মানে লিগ এবং ক্লাব ইন্টার মায়ামি, দুই পক্ষের সঙ্গেই অ্যাডিডাসের ব্যাবসায়িক গাটছড়া বাঁধা। এদিকে মেসির সঙ্গেও তাদের রয়েছে অনেক দিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক। তাই নিজেদের ব্যাবসায়িক স্বার্থেই অ্যাডিডাস চাইছিল মেসি ইন্টার মায়ামিতে আসুক। আর এটা নিশ্চিত করতে যত রকমের দেন-দরবার প্রয়োজন, তলেতলে সবই করেছে অ্যাডিডাস। তাছাড়া শুধু মুখের মিষ্টি কথাতেই কিন্তু চিড়া ভিজায়নি অ্যাডিডাস। এমএলএস থেকে নিজেদের প্রাপ্ত লভ্যাংশের একটা অংশ মেসিকে দেওয়ার অঙ্গীকারও করেছে। মানে ইন্টার মায়ামিতে গিয়ে মেসি অ্যাডিডাসের কাছ থেকে তাদের লভ্যাংশের অংশও পাবেন।
অ্যাডিডাসের মতো অ্যাপলও নিজেদের লভ্যাংশের একটা অংশ মেসিকে দেবে। অ্যাপল এমএলএসের সম্প্রচার স্বত্ব কিনে নিয়েছে। লিগের সবগুলো ম্যাচ তারাই সম্প্রচার করে। তাই নিজেদের নতুন বাজার দখলের আশায় অ্যাপলও মেসিকে ইন্টার মায়ামিতে আনার জন্য তলেতলে দেন-দরবার চালিয়েছে। ক্লাবের বেতন, অ্যাডিডাস ও অ্যাপল-এর লভ্যাংশের অংশ তো আছেই। মসিকে ‘হ্যাঁ’ বলার জন্য আরও বড় একটি টোপও ফেলা হয়েছিল। খেলা ছাড়ার পর ভবিষ্যতে এমএলএসের কোনো একটা ক্লাবের মালিকানার অংশীদার হওয়ার সুযোগ পাবেন মেসি। ডেভিড বেকহামও লস অ্যাঞ্জেলস গ্যালাক্সিতে খেলোয়াড় হিসেবে যোগ দেওয়ার সময় চুক্তিতে এই ‘অপশন’ রাখা হয়েছিল। সেই সুবাদেই বেকহাম এখন ইন্টার মায়ামির মালিক। মানে ভবিষ্যতে মেসিও হতে পারবেন যুক্তরাষ্ট্রের লিগের কোনো ক্লাবের মালিক।