শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

সিন্ডিকেটের হাতেই পেঁয়াজের বাজার

**২০ টাকায় আনা পেঁয়াজ ৬০ টাকায় বিক্রি **খুচরায় কমছে না দেশি জাতের দাম

আপডেট : ১৭ জুন ২০২৩, ০৮:০০

সিন্ডিকেটের হাতেই পেঁয়াজের বাজার। আমদানির পরও পেঁয়াজের দাম সেভাবে কমেনি। রাজধানীর পাইকারি বাজারে কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এখনো প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের প্রতি কেজির দাম (সব খরচসহ) ২০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে মানভেদে তা ৪৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আমদানির শুরুতে যেসব পেঁয়াজ এসেছে তার মান খুব একটা ভালো নয়। ফলে এই পেঁয়াজ বাজারে প্রভাব ফেলতে পারেনি। তাই দেশি পেঁয়াজের দাম সেভাবে কমেনি। তবে ভোক্তারা বলছেন, পেঁয়াজের বাজার সিন্ডিকেটের হাতেই রয়েছে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে অতি মুনাফার কারণেই নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম কমছে না।

উল্লেখ্য, দেশে পেঁয়াজের কোনো সংকট না থাকা সত্ত্বেও গত মাসে লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম। ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজির দেশি পেঁয়াজ মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় উঠে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে স্বল্প আয়ের মানুষ। এ অবস্থায় গত ৫ জুন পেঁয়াজ আমদানিতে বিধিনিষেধ তুলে নেয় সরকার। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের, শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিল সরকার। এ ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি আমাদের জন্য উভয়সংকটের মতো। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে দাম কমে যায়, এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর আমদানি না করলে দাম বেড়ে যায়, ভোক্তাদের কষ্ট হয়।

কিন্তু এখন আমদানির পরও পেঁয়াজের দাম সেভাবে কমছে না। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শান্তিনগর ও নিউমার্কেটসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা বেলায়েত হোসেন বলেন, পেঁয়াজ আমদানি করে কী লাভ হলো? আগের মতোই বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের কাছে আমরা আটকে গেছি। তারা ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। না হলে বাজারে পেঁয়াজের দাম এত হবে কেন?

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত ৩০ মে ভারতে পাইকারিতে প্রতি টন  পেঁয়াজের দর ছিল ১২১ ডলার। এ হিসেবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে ১৩ টাকা। এর সঙ্গে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ২০ টাকার আশপাশে হবে। এর সঙ্গে মুনাফা যোগ করে আমদানিকারক পেঁয়াজ বিক্রি করবেন। এরপর পাইকারি বাজার হয়ে খুচরা বাজারে ভোক্তার কাছে আসবে পেঁয়াজ। তাহলে ২০ টাকার পেঁয়াজ খুচরা বাজারে কেন ৬০ টাকায় বিক্রি হবে?

এছাড়া এখন দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ারও কোনো কারণ নেই। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টন। চলতি মৌসুমে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ৩৫ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের মজুত আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। এক কেজি দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রতিদিন বিভিন্ন নিত্যপণ্যের খুচরা বাজারদর নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। সেই প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায়। তাহলে এখন পেঁয়াজের দাম এত বেশি কেন?—এই প্রশ্ন এখন ভোক্তাদের।

ইত্তেফাক/এমএএম