বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

এখন আমার সক্ষমতা নেই অপরাধ করার : মুক্তির পর জল্লাদ শাহজাহান

আপডেট : ১৮ জুন ২০২৩, ১৮:২১

জল্লাদ শাহজাহান মুক্তির পর বলেছেন, ‘৩০ বছর অনেক সময়। এতদিন জেল খাটার পর এখন আর কোনো অপরাধ করতে চাই না। আর এখন আমার সক্ষমতা নেই অপরাধ করার।’

কারাগার থেকে যখন জল্লাদ শাহজাহান বের হয়ে আসেন তখন তার মুখে ছিল হাসি আর পরনে ছিল সাদা শার্ট-প্যান্ট। তিনি বের হওয়ার সময় তার আশপাশে প্রায় ১০-১৫ জন কারারক্ষী ছিলেন। বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার প্রথম মুহূর্তে ডুকরে কেঁদে ওঠেন শাহজাহান। এরপর একে একে শাহজাহান তার কারাগারে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।  

রোববার (১৮ জুন) বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্ত হন। শাহজাহান তার সাজা থেকে ১০ বছর পাঁচ মাস ২৮দিন ক্ষমা পেয়েছেন। দেশের বিভিন্ন কারাগারে ২৬ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করেছেন তিনি। ৩১ বছর ছয় মাস সাত দিন কারাভোগের পর মুক্ত হন শাহজাহান। 

২৬ জন আসামিকে ফাঁসি দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বিচার প্রক্রিয়া শেষে কারাগারে সাজা ভোগ করছিলাম। তাই কারাগারে নিয়ম অনুযায়ী সাজা প্রাপ্ত আসামিদের কোন না কোন কাজ করতে হয়। আমি একটু সাহসী ছিলাম বলে আমাকে জল্লাদের কাজে নিয়োগ করা হয়। এসব ফাঁসি আমার সিদ্ধান্তে আমি দেইনি, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি দিয়েছি।’

কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তিনি এখন কোথায় যাবেন প্রশ্ন করা হলে জল্লাদ শাহজাহান বলেন, ‘আমার কোন বাড়িঘর নেই। শুনেছি আমার এক বোন ও ভাগিনা আছে। তবে তাদের সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি। তবে এখন আমি বসুন্ধরার নর্দ্দা এলাকায় একজনের বাসায় যাচ্ছি। কারাগারে থাকার সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, তিনি যেন আমাকে বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন। যাতে বাকি জীবন আমি সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারি।’ 

তার বের হওয়ার আগে ঢাকা কেরানীগঞ্জের জেলার মাহবুবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জল্লাদ শাহজাহান এ পর্যন্ত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন। এতে প্রতি ফাঁসির জন্য তার দুই মাস করে শাস্তি মওকুফ হয়েছে। এছাড়া জেলে কেউ ভালো কাজ না করলে, কারও শাস্তি মওকুফ করা হয় না। তবে শাহজাহান জেলে থাকা অবস্থায় ভালো কাজ করে দশ বছর পাঁচ মাস সাজা কমিয়েছেন।’

১৯৮৯ সালে সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে শাহজাহান জল্লাদ-জীবনের সূচনা করেন। এরপর কারাগারে মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়নের সময় আসলেই তার ডাক পড়ে। টানা আট বছর জল্লাদের কাজ করার পর ১৯৯৭ সালে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান জল্লাদের স্বীকৃতি দেন।

জল্লাদ শাহজাহানের পুরো নাম মো. শাহজাহান ভূঁইয়া। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ। জন্মস্থান নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে। তিন বোন এক ভাই। বাবার নাম হাসান আলী ভূঁইয়া। মা সব মেহের। শাহজাহান পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত।

ইত্তেফাক/এসজেড