বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

টাকার জন্য চাঁদনির পরিকল্পনাতেই জেপি নেতা সালাম খুন

চাঁদনিসহ গ্রেফতার ৩

আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৩, ০০:২৫

অর্থ হাতিয়ে নিতেই কথিত বান্ধবী চাঁদনির পরিকল্পনাতেই খুন হয়েছেন জাতীয় পার্টি-জেপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম বাহাদুর। মৃত্যুর আগপর্যন্ত চাঁদনি ও তার গ্রুপের সদস্যরা নৃশংসভাবে নির্যাতন করেন সালামের ওপর। নির্যাতনের পর এক দফা চিকিৎসা করিয়ে আবারও তাকে নির্যাতন করা হয়। এতেই একপর্যায়ে মৃত্যু হয় সালামের। মৃত্যুর আগে চাঁদনি ৭ লাখ টাকার একটি চেক সালাম বাহাদুরের কাছ থেকে লিখে নেন। আরও টাকার জন্য নির্যাতন অব্যাহত ছিল। চাঁদনিসহ তিনজনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নির্যাতনের সাক্ষীরাও গতকাল মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। 

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার ধরলা ইউনিয়নের গাজিন্দা বড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা চাঁদনি (২৫)। একাধিকবার বিয়ে হলেও সবগুলো ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তার সঙ্গেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল সালামের। গত শনিবার বেলা ৩টার দিকে সালাম কিছু ফল নিয়ে চাঁদনির বাড়িতে যান। ঘরে বসে কথা বলার একপর্যায়ে চাঁদনির সহযোগী আকাশ আহমেদ নয়নসহ কয়েক জন এসে ঐ ঘরের মধ্যে সালামকে বন্দি করেন। অবৈধ সম্পর্কের কথা বলে সালামের কাছ থেকে টাকা দাবি করেন। সালাম টাকা দিতে অস্বীকার করায় তার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। ড্রিল মেশিন দিয়ে তার পায়ে ছিদ্র করা হয়। একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন সালাম। তখন স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক মোশারফ হোসেনকে ডেকে এনে তার চিকিৎসা করানো হয়। এতে জ্ঞান ফেরে সালামের। একপর্যায়ে সালাম ৭ লাখ টাকার চেক তাদের লিখে দেন।

সূত্র আরও জানিয়েছে, ৭ লাখ টাকার চেক পাওয়ার পর আরও টাকার জন্য আবার নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে তার একটি হাত ভেঙে ফেলে তারা। তার হাতের কবজিও ভেঙে যায়। অব্যাহত নির্যাতনের মুখে সালাম আবারও অজ্ঞান হয়ে পড়লে একটি প্রাইভেট কারে করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু ঐ হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, তার অবস্থা ভালো নয়, ঢাকার কোনো হাসপাতালে নিতে হবে। এরপর চাঁদনিসহ দুই জন ঐ প্রাইভেট কারেই তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু পথেই মৃত্যু হয় সালামের। একপর্যায়ে চাঁদনি এবং ঐ যুবক সালামের লাশ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে ফেলে পালিয়ে যান।

তদন্ত কর্মকর্তারা এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে পল্লি চিকিৎসক মোশারফ হোসেন, ঐ গ্রামের বাসিন্দা আবু জাহিদ হাসান ছায়িম ও ইদ্রিস আলীকে ঢাকায় এনে তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনেছেন। গতকাল মঙ্গলবার আদালতে এই তিন জন সাক্ষী হিসেবে ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে আজ বুধবার পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার সংবাদ সম্মেলন করবেন।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার মধ্যরাতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে এক তরুণ ও এক তরুণী লাল রঙের একটি প্রাইভেট কার থেকে সালামের লাশ ফেলে যান। পরে পথচারীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাত ও হাতের কবজি ভেঙে এবং পায়ে ড্রিল মেশিন দিয়ে ছিদ্র করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

আব্দুস সালাম বাহাদুর (৫৮) জেপির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি পিরোজপুরের ইন্দুরকানিতে। ঢাকায় ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোডের ৩৫-এ বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগে ঠিকাদারি করতেন।

ইত্তেফাক/এমএএম