এশিয়া কাপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো বড় দুইটা আসর টাইগারদের সামনে। অন্যসব দেশ যখন ব্যস্ত এই টুর্নামেন্টগুলোতে নিজেদের শক্তিশালী দল গঠন নিয়ে সেইখানে বাংলাদেশের মাথাব্যথা এখন এত বড় দুই আসরে নিজেদের অধিনায়ক নির্ধারণ নিয়ে। কেননা গত পরশুই টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল স্বেচ্ছায় নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব থেকে।
শুধু তাই নয়, এই দুই টুর্নামেন্টের প্রথমটায় অর্থাৎ চলতি মাসের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এশিয়া কাপে টাইগাররা খেলতে নামবে দলের অভিজ্ঞ এই ওপেনারকে ছাড়াই। আর এর পুরোটাই ঘটেছে তামিমের চোট নিয়ে শুরু থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবির) খামখেয়ালির কারণে। যদি সময়মতো বাঁহাতি এই অভিজ্ঞ ওপেনারের চিকিৎসা করানো হতো তাহলে তিনি আগেই সেরে উঠতেন, এমনটাই জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন। আর এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক অবস্থানেও যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া ভবিষ্যতে যাতে অন্য কোনো ক্রিকেটারকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে না হয়, এজন্য পুরো ব্যাপারটির তদন্তের প্রয়োজনীয়তাও দেখছেন বিসিবি বস।
তামিমের পিঠের চোট নিয়ে গেল মাসের আগ অবদি সঠিক তথ্যই জানতেন না বিসিবি সভাপতি। শুধু তাই নয়, বিসিবির মেডিক্যাল টিমও এ বিষয়ে একেক সময় একেকটি তথ্য দিয়েছে গণমাধ্যমে। তারা বিভিন্ন সময় স্ক্যান করিয়েও তামিমের চোটের সঠিক কারণ খুঁজে পায়নি। তবে গেল মাসে পরিবারের সঙ্গে দুবাইয়ে ছুটি কাটাতে গিয়ে তামিম সেখানে গিয়ে করা পিঠের স্ক্যান রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন বিসিবি সভাপতিকে। যে রিপোর্টে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, তার পিঠের নিচের অংশের ডিস্কে এল ফোর ও এল ফাইভে ক্ষয় ধরেছে কিছুটা। পাপন জানান, তখনই কেবল তামিমের সমস্যার কথা তিনি জানতে পারেন। এর আগে যারা তাকে জানিয়েছে, তাদের কারো কাছ থেকে এমন কোনো তথ্য তিনি পাননি।
গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) নিজের বাসার গ্যারেজে অনুষ্ঠিত হওয়া সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পাপন জানান, ‘তামিম কিন্তু ঢাকাতেও এমআরআই স্ক্যান যা যা করার, এগুলো সব করেছে। আমার জানা মতে, ভারতে করেছে, ব্যাংককে করেছে। লন্ডনেও এক বার গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে এসেছে নিজ থেকে। অনেক বারই করা হয়েছে এমআরআই। এবারই প্রথম, দুবাই থেকে ও আমাকে একটা রিপোর্ট পাঠায়। এই রিপোর্টে আমি প্রথম বার দেখি যে, ওর একটা সমস্যা আছে। দেখার পরপরই আমি ওকে বলেছি, তুমি দেবাশিষসহ (বিসিবির প্রধান চিকিত্সক) আমাকে একটা কনফারেন্স কল করো। আমাকে কেন এ কথা বলা হয়নি।’
এ সময় পাশ থেকে তামিম বিস্তারিত জানিয়ে বলেন, ‘আমার যে সমস্যা সেটা গত বছরের নভেম্বর থেকেই ছিল। কিন্তু পাপন ভাইয়ের কথা হলো যে, উনাকেও তো একজন এসব জানায় কিন্তু এটা জানায়নি (যে সমস্যা ধরা পড়েছে)। আমি তো উনাকে আগে (রিপোর্ট) পাঠাইনি। উনাকে যখন প্রথম বার রিপোর্ট পাঠাই, উনি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ফোন করে বলছেন যে, ‘এ কথা আমাকে জানানো হয়নি কেন এতোদিন! এটা তুমি জিজ্ঞেস করবে এবং আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দেবে। যা-ই হোক, এটা নিয়ে আজকে আমরা অনেক আলোচনা করেছি। এটা কারো সঙ্গেই হওয়া উচিত নয়। আমরা যদি ওপেন থাকি অনেক সময়, তাহলে এই সমস্যাগুলো হয় না। এখন আমরা খুবই পরিষ্কার যে, গত ছয় মাসে কী হয়েছে।’
এ সময় পাপন আশ্বাস দেন যে এই ঘটনার তদন্ত করা হবে। তিনি নিজেই জানালেন, অবহেলা না করা হলে হয়তো এতদিনে সুস্থ হয়ে উঠতেন তামিম। বলেন, ‘আমার তো মেজাজই গরম হয়ে গেল ওর (তামিম) কাছ থেকে শোনার পর এবং রিপোর্ট দেখার পর। আমি মনে করি, এই ব্যাপারটা আমাদের আরো তদন্ত করে বের করা দরকার যে, এই জিনিসটাকে যেভাবে আমাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে, আর বাস্তবে যা হয়েছে, এটার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। এটা যাতে ভবিষ্যতে আর কারো সঙ্গে না হয়, তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। জালাল ভাইয়ের (বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান) সঙ্গেই বসব, এটা আমাদের বের করতে হবে।’
গত নভেম্বরে ঘরের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার পর থেকেই তামিমের পিঠের ব্যাথা দেখা দেয়। এর পর থেকে বিভিন্ন সময়েই এ ব্যথা মাথাচাড়া দিয়ে উঠত। গেল মার্চে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ ও মে মাসে ইংল্যান্ড সফরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা সিরিজের আগে ইনজেকশন নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তামিম। তবে আবার ব্যাথা দেখা দেয় যার কারণে কয়েক দিন আগে লন্ডনে দুই দফায় ইনজেকশন নিয়েছেন তিনি। তবে খেলতে পারবেন না এশিয়া কাপ। তিনি মাঠে ফিরবেন বিশ্বকাপের আগে টাইগারদের নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে।