রোববার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৬ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ডিমের দামে রেকর্ড

আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ০৮:০০

আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে ডিমের বাজার। গতকাল রবিবার রাজধানীর বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের প্রতি হালির দর উঠেছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা রীতিমতো রেকর্ড। দেশে এর আগে কখনো এত দামে মানুষকে ডিম কিনতে হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডিমের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে স্বল্প আয়ের মানুষ। কারণ, ডিমের দামে মাছ বা মাংস কোনোটাই কেনা সম্ভব নয়। তাই স্বল্প আয়ের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে বড় ভরসার জায়গা ডিম। কিন্তু এখন তা-ও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কেন বাড়ছে ডিমের দাম? খামারিরা জানিয়েছেন, প্রচণ্ড গরমে লোডশেডিংয়ে খামারে অনেক মুরগি মারা গেছে। ফলে ডিম উৎপাদনে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে, যার কারণে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ডিমের সরবরাহ নেই। খামারিরা বলেছেন, আগামী অক্টোবরের আগে এই ঘাটতি পূরণ হবে না। এছাড়া পোলট্রি ফিডসহ এই খাতে সংশ্লিষ্ট প্রায় সবকিছুর দাম বাড়ায় ডিমের দামে এর প্রভাব পড়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। সে সময়ও প্রতি হালি ডিমের দাম ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ফার্মের বাদামি ডিম প্রতি হালি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে এর চেয়েও বেশি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

সরকারে বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) গতকাল তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে ডিমের দাম বাড়ার তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনেও গতকাল রাজধানীর বাজারে ফার্মের বাদামি ডিমের হালি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে তুলে ধরেছে। অথচ এক মাস আগেও প্রতি হালি ডিম ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এক বছর আগে প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। টিসিবির হিসাবে গত এক বছরে প্রতি হালি ফার্মের বাদামি ডিমের দাম বেড়েছে ২৮ শতাংশের বেশি। গতকাল কারওয়ান বাজারের এক ডিম বিক্রেতা বলনে, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ডিমের সরবরাহ কম। এছাড়া বাজারে এখন মাছ, সবজির দামও চড়া। ফলে ডিমের বাড়তি চাহিদার কারণে দাম বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে মুরগির ডিমের হালির গড় দাম ছিল ২৭ টাকার আশপাশে। আর এখন তা ৫৫ টাকা হালিতে উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খোন্দকার মো. মহসিন গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, গত কিছুদিনে প্রচণ্ড গরমে খামারে অনেক মুরগি মারা গেছে। ফলে ডিম উৎপাদনে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, আগামী অক্টোবরের আগে এই ঘাটতি পূরণ হবে না। এছাড়া  ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পোলট্রি ফিডসহ অন্য সব খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। এতে ক্ষুদ্র খামারিরা টিকতে না পেরে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালে প্রতি কেজি ভুট্টার দাম ছিল ১৭ দশমিক ৩০ টাকা, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকার ওপরে। অথচ পোলট্রি খাদ্যে ভুট্টার ব্যবহার ৫৭-৫৮ ভাগ। এছাড়া পোলট্রি খাদ্যে সয়াবিন খৈলের ব্যবহার শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ। ২০২০ সালে প্রতি কেজি সয়াবিন খৈলের দাম ছিল ৩৫-৩৬ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি সয়াবিন খৈলের দাম ৮৪ টাকারও বেশি। এছাড়া জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি এবং ডিজেল, বিদ্যুৎ, পরিবহনসহ সবকিছুর দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। এসব কারণে ডিমের দাম বেড়েছে।

হঠাৎ করে ডিমের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘এর আগে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল। তখন আমরা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে দাম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘সে সময় ডিম ও ব্রয়লার মুরগির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আমরা একটি প্রতিবেদনও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিলাম। এখন এ ব্যাপারে তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়লে আমরা অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করব।’

ইত্তেফাক/এমএএম