মহাকালের সর্বগ্রাসী দাবানলে ছারখার হয়ে যাওয়া জীবনের মধ্যেও বেঁচে থাকে কিছু শব্দ, কিছু ছন্দ, কিছু সুর বা তাল—যা চিরন্তন সুন্দর। এগুলো আমাদের অন্তর্গত অন্তর্দহন ও স্বাজাত্যবোধকে নাড়া দেয় অহর্নিশ—আমরা সেগুলোকে ‘কবিতা’ বলি। ‘হূদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানোর’ সেই চির পুরাতন মানবিক আকাঙ্ক্ষা বা চেতনার প্রদীপ্ত শিখায় কুঁকড়ে থাকা আমাদের হূদয়কে জাগিয়ে তোলার যুথবদ্ধ এক শৈল্পিক প্রয়াসের নাম—‘ত্রিতালে মহাকাল’। এই শিরোনামে আবৃত্তিসন্ধ্যা যা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ৩০ জুলাই রবিবার বেইলি রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে।
ফ্লোটিং ক্যাপিটাল আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির এই সময়ে অস্থিরতা এক বৈশ্বিক মহামারির মতো। পৃথ্বীগ্রামের এই ছোট্ট কুঁড়েঘরও বাঁচতে পারেনি সেই বৈশ্বিক পারিবারিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক অস্থিরতার করাল গ্রাস থেকে। মানুষের সুখ-দুঃখ হাসিকান্না এখন সমষ্টিগত নয়, অনেক বেশি ব্যক্তিগত। অন্যদিকে সামাজিকীকরণ ঘটছে অরুচি, অসততা, চৌর্যবৃত্তি আর কাঙালপনার। ঠিক এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা নিজেদের দিকে তাকাতে চাই। মুঠোফোনের রিলের ভিউ না বাড়িয়ে নিজেদের হূদয়ের গভীরতম প্রকোষ্ঠে যে সুকুমার মনোবৃত্তিটুকু এখনো জেগে আছে সেইটুকুরই চর্চা করতে চেয়েছেন তিন আবৃত্তি শিল্পী ইনামুল হক সাগর, ইফতেখায়রুল ইসলাম এবং আবির সিদ্দিকী শুভ্র—যাঁরা পেশগত জীবনে তিনজনই বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত। এক ঘণ্টা বিশ মিনিটের এই প্রযোজনায় তিনজন মোট ১৫টি বিভিন্ন ধরনের কবিতা আবৃত্তি করেন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু, দেশপ্রেম, একুশ, মুক্তিযুদ্ধ, প্রেম, দ্রোহ, বেদনা—কী না ছিল! তাঁদের চমত্কার পেশাদার আবৃত্তি, দুর্দান্ত আবহসংগীত, মোহনীয় লাইট এবং সেট ডিজাইন মিলেমিশে এক অভূতপূর্ব কাব্যিক মোহগ্রস্ততা তৈরি করেছিল—যার মুগ্ধতামাখা প্রশংসাবাণী ঝরে পড়ছিল সবার মুখে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১), স্পেশাল ব্রাঞ্চ মো. মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) প্রমুখ। —প্রেসবিজ্ঞপ্তি