ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারি বৃষ্টি এখন দক্ষিণ থেকে উত্তরের দিকে সরে এসেছে। উত্তরাঞ্চলে ও উজানে বৃষ্টি বাড়ায় তিস্তার পানি আজ নীলফামারীর ডালিয়া ও রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সোমবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা জানান, নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির কারণে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিভারী বৃষ্টিতে কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত নদীগুলোর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুশিয়ারা ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ গতকাল বলেন, গত শুক্রবার থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, সিকিম ও বাংলাদেশের রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে ভারি বৃষ্টির কারণে একাধিক নদ-নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি উচ্চতা দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু করেছে। ফলে এই তিন বিভাগে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত রবিবার বন্যার পানি যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এছাড়া নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার ওপর দিয়ে তিস্তা নদীর পানি বন্যা বিপদসীমার কাছাকাছি উচ্চতা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে শুক্রবার থেকে। গতকাল প্রায় সারাদিন রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে গতকাল সোমবার রংপুর বিভাগের সকল নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে প্রবাহিত সকল নদনদীর পানি বন্যা বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আপাতত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে বন্যার কোন আশঙ্কা নেই।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টি চলবে আগস্ট মাসজুড়েই। তবে তা থেমে থেমে নানা জায়গায়। কোথাও ভারী আবার কোথাও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কামাল মল্লিক জানান, আগামীকাল বুধবারের পর বৃষ্টিপাত কমতে পারে। তবে ২০ আগস্টের পর আবার বাড়তে পারে। দেশের পার্বত্য তিন জেলায় পানি কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে বাড়ছে পানি। এতে নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা জানান, আজ থেকে বৃষ্টিটা কমবে। তবে সেটা মানে এই না যে বৃষ্টি একবারে কমে যাবে। তেমন হবে না। আজকের পর বৃষ্টি কমলেও ২০ তারিখের পর ঢাকায় বৃষ্টির পরিমাণটা আবার বাড়ার সম্ভাবনা আছে।