এক সময় নিকলীর হাওর-বাওড়ে অনেক দেশি পাখি দেখা যেত। কিন্তু এলাকায় স্থাপনা ও বসতবাড়ি গড়ে ওঠায় কমেছে দেশীয় পাখির আশ্রয়ের ঠিকানা। আবার শিকারিদের উত্পাত ও ক্ষতিকর কীটনাশকযুক্ত ফসল খেয়েও মারা যাচ্ছে এসব পাখি। ফলে নিকলীর হাওরে কমছে দেশি পাখি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের মানুষ প্রয়োজনের তাগিদেই ঝাউ-জঙ্গল কাটছে। সবার ঘরবাড়ি খড়ের এবং টিনের ঘর থেকে দালান হচ্ছে। ফলে পাখিরা বাসস্থান হারিয়ে ছুটছে অন্যত্র। ফলে পাখির কিচিরমিচির ডাকে এখন আর ঘুম ভাঙে না স্থানীয়দের।
বিশেষজ্ঞরা জানান, গ্রাম-গঞ্জে ফসলে কীটনাশক ব্যবহার পাখি বিলুপ্তির ক্ষেত্রে অনেকাংশেই দায়ী। কৃষকরা বিভিন্ন ফসলে সব সময় কীটনাশক ব্যবহার করেন। এতে পাখির খাদ্য ফড়িং, ফুতি, প্রজাপতি, মশা, লেদা পোকা, গোয়ালীসহ বিভিন্ন প্রকার কীটপতঙ্গ মারা যায় বা রোগে আক্রান্ত হয়। পাখি দিনের পর দিন এসব খেয়ে মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া শিকারিদের নিষ্ঠুরতা তো রয়েছেই। ফলে পাখির বিলুপ্তির কারণে যেমন জীববৈচিত্র্যের সংকট বাড়ছে, তেমনি হারিয়ে ফেলছে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ।
সদর উপজেলার তৈইলাহাটি গ্রাামের বাসিন্দা ৬৮ বছরের বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১০, তখন গ্রামে কত রঙের পাখি ছিল তা বলে শেষ করতে পারব না। ঘরের চালে পাখি বাসা বাঁধত। পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙত। অথচ এখন আর সেই পাখি নেই।’ নিকলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়া আহমেদ তুলিপ বলেন, আগে রাস্তায়, বিভিন্ন গাছে-গাছে, মাঠে চারদিকে পাখি বসে থাকত। কিন্তু এখন মাঠ আছে, ফসল আছে, গ্রাম আছে অথচ সেই পাখি নেই।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ মনির বলেন, গ্রামের চারদিকে ঘনবসতির কারণে পাখি এখন আশ্রয়স্থল হারাচ্ছে। শুধু তাই নয়, কীটনাশকযুক্ত ফসল খেয়ে অনেক পাখি মারা যাচ্ছে। পাখি রক্ষার্থে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলেই হয় তো আবারও পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাবে। নিকলী উপজেলা পাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু হানিফ বলেন, নিকলীর হাওরে পানকৌড়ি, ভূতিহাঁস, পিয়ংহাঁস, খয়রাবগা, লেঞ্জাহাঁস, নেউপিপি, সরালী, রাজসরালী, চখাচখি, পাতি মাছরাঙা, পাকড়া মাছরাঙা, মরিচা ভূতিহাঁস, সাধারণ ভূতিহাঁস, শোভেলার, পাতিহাঁস, ডাহুক, বেগুনি কালেম, গাঙচিল, বালিহাঁস, ডুবুরি, বক, সারসসহ দেশি-বিদেশি পাখি রয়েছে। এর মধ্যে ৯৮ প্রজাতির পরিযায়ী, ১২১ প্রজাতির দেশি ও ২২ প্রজাতির হাঁসজাত পাখি আছে। কিন্ত বর্তমানে এ সব পাখির বেশির ভাগই বিলুপ্তপ্রায়।
নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা পারভিন বলেন, নিকলীর হাওরে যাতে কেউ পাখি শিকার না করতে পারে, সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্টদের হাওর তদারকি করতে নির্দেশ দেওয়া আছে। পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।