নতুন ভোটার হতে অন্তহীন সমস্যা। সমস্যা আর বিপত্তির ঘটনায় বিরক্ত সেবাগ্রহীতারা। নতুন ভোটার হওয়ার পর তা সার্ভারে ডাটা আপলোড নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। ইসির মাঠ প্রশাসন এবং সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট আইটি শাখার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ। কেননা নতুন ভোটার হওয়ার পর দিনের পর দিন তা আপলোড না করার অভিযোগ রয়েছে ইসির সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এতে করে সেবাগ্রহণের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়েন নতুন ভোটাররা। শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে সম্প্রতি ভোটার আপলোডে বিলম্বের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করে একজন নির্বাচন কমিশনার ইউ নোট (আন-অফিসিয়াল নোট) দেওয়ার পর নড়েচড়ে বসে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি)।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবির ইত্তেফাককে বলেন, ‘ফিঙ্গার সমস্যার কারণে কিছু কিছু জায়গায় ভোটার নিবন্ধন তথ্য আপলোডে সমস্যা বা দেরি হয়ে থাকতে পারে। নতুন ভোটার নিবন্ধন তথ্য ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আপলোড করতে আমরা ইতিমধ্যেই নির্দেশনা দিয়েছি। এ ব্যাপারে বুধবার আবারও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছি। আর ভোটার নিবন্ধন নিয়ে ‘ইউ’ নোটের ব্যাপারে আমার জানা নেই। আমাকে দেওয়া হয়নি। এটি কমিশনের ব্যাপার। দিলেও সিইসি স্যারের কাছে দিতে পারে। ভোটার? নিবন্ধনে সমস্যার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।’
ইসির সংশ্লিষ্ট বলছেন, নতুন ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে দুই ধরনের বিলম্বের তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচনি কর্মকর্তা বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার আর দ্বিতীয়টি ইসি সচিবালয়ের আইটি শাখার। সাধারণত ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে ভোটার তালিকা হালনাগাদের বাইরে প্রতিদিন অসংখ্য নতুন ভোটার অনলাইনে ভোটার ফরম পূরণ করেন। পরে এসএমএসের মাধ্যমে ভোটার হওয়ার সময় জানিয়ে দেওয়া হয় অথবা ভোটার ফরম অনলাইনে পূরণের কপি নিয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে চলে যান। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ছবিসহ ফিঙ্গার গ্রহণ করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় সার্ভারের আপলোড করে দেন। ভোটারের ডাটা আপলোডের পর তা ফিঙ্গার ম্যাচিং করা হয়। দেখা গেছে, ফিঙ্গার ও ছবি তোলার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নতুন ভোটার ফরম আপলোড করতে বিলম্ব করেন। লম্বা সময়ে ফেলে রাখেন। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয় কোনো ভোটারের ফিঙ্গার ম্যাচিং না করলে। এক্ষেত্রে উপজেলা কর্মকর্তারা ইসি আইটি শাখায় চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করে থাকেন। এখানে সময়ক্ষেপণ করেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ৭ মে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এম এ জি মোস্তফা ফেরদৌস স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ইসিকে জানান, নুসরাত জাহান রুনু ফরম নম্বর এনআইডিএফএন (১১৪৭৪২৩৬০)-এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ মার্চ অত্র কার্যালয়ে ভোটার রেজিস্ট্রেশনের জন্য ছবি ও বায়োমেট্রিক গ্রহণ করা হয়। অত্র কার্যালয় হতে ডাটাটি আপলোড সম্পন্ন করা হলে একই সঙ্গে অন্যান্য ডাটাগুলোর এনআইডি নম্বর পড়লেও নুসরাত জাহান রুনুর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর পড়েনি। উক্ত ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র না পাওয়ায় বিভিন্ন সেবা পেতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন মর্মে অবহিত করেছেন। উল্লেখ্য, ভোটারটি প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার আঙুলের ছাপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে ভোটার তালিকায় তার ডাটা আসছে না। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সমস্যার বিষয়টি বিবেচনা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এখনো পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভোটারের তথ্য আপলোড করা হয়নি।
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন কোনো ভোটারের ফিঙ্গার ম্যাচিং না হলে ভোগান্তির শেষ নেই। মাসের পর মাস দিনের পর দিন দরবারে ঘুরে সেবা মেলে না সেবাগ্রহীতাদের। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচনি কর্মকর্তারা সমস্যা সমাধানে ইসি সচিবালয়কে চিঠি দিয়েও সমাধান পান না। সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে গোসাইরহাটে। ভোটার কার্যক্রমে ইসির বিলম্বের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) ইউ নোট দেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ইত্তেফাককে বলেন, গোসাইরহাটের সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে। দ্রুত যাতে নতুন ভোটার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় সেই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।