কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় নদী ও পুকুরে পানির অভাবে পাটজাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকরা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে পদ্মা নদীতে পাটজাগ দিচ্ছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে পদ্মা নদীর তীব্র স্রোতে পাটের আঁটি অনেক সময় ভেসে যাচ্ছে। উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে পাটচাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, বীজ বিতরণ ও সার বিনা মূল্যে দিয়েছে। গত বছর কৃষকরা প্রতি মণ পাটে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দাম পেয়েছেন। প্রতি বিঘায় বীজ বপন থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় প্রায় ১০ মণ পাটের ফলন পাওয়া যায়।
কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, পাট কাটা প্রায় এক মাস আগে থেকে শুরু হয়েছে। নদী ও পুকুরে পানির অভাবে পাটজাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদী ও পুকুরে পানির অভাবে বর্তমানে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে সোলাইমান বাবার আস্তানা পর্যন্ত পদ্মা নদীতে পাটজাগ দেওয়া হচ্ছে। পদ্মা নদীতে পাটজাগ দেওয়ার পর স্রোতে পাটের আঁটি ভেসে যাচ্ছে। এর ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারপরও কৃষকরা পদ্মা নদীতে পাট জাগ দিচ্ছে। পাটচাষি মনোয়ার হোসেন বলেন, চলতি বছর চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। তবে দাম নিয়ে আমি কিছুটা চিন্তিত। কৃষক হাসান আলী বলেন, বর্তমানে একজন দিনমজুরের ৫০০ টাকা হাজিরা। তার ওপর বেড়েছে বিভিন্ন কৃষি উপকরণের দাম। এক বিঘা জমিতে পাট হয় ১০ মণ। পাট কেটে তা জাগ দিয়ে শুকিয়ে ঘরে তুলতে মণপ্রতি ২ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়। গত বছর মণপ্রতি পাটের বাজারমূল্য ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। কৃষক সালাম বলেন, পাটের জন্য কুষ্টিয়ার খ্যাতি রয়েছে। ‘খালবিলে অধিকাংশ সময় পানি থাকে না। আবার কোনো কোনো খালে মাছচাষ করায় পানি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় পাটজাগ দেওয়া ও আঁশ ছাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হয়।
ভেড়ামারা উপজেলার কৃষি অফিসার শায়খুল ইসলাম বলেন, এ বছর ভেড়ামারা উপজেলায় ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পাটচাষ হয়েছে। গত মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের পাটচাষে আগ্রহ বেড়েছে। সরকার ধান, চাল, গম, ভুট্টা, চিনি ও সার ছয়টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। এখন পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কৃষক যেন ভালো দাম পান, এজন্য সরকার বিদেশে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হায়াত মাহমুদ বলেন, পাটের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন জাতের বীজ, সার, প্রণোদনা প্রদান এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে সবরকম সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা পাটচাষে ভারতীয় জাত জেআরও-৫২৪ বীজের ওপর নির্ভরশীল ছিল। অতিরিক্ত খরা ও পোকামাকড়ে আক্রান্ত হয়ে এই জাতটি কৃষকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। কৃষকদের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত জাত বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি-১) চাষ জনপ্রিয় করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।