বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান আপাতত বন্ধ

হাইকোর্টের আদেশের ওপর ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা

আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ০২:২৬

শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাঠানোর বিষয়ে ওঠা অভিযোগের অনুসন্ধান আপাতত বন্ধ থাকছে। দুদকসহ কয়েকটি সরকারি সংস্থাকে অনুসন্ধানের নির্দেশনাসংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের ওপর আগামী বছরের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। একই সঙ্গে হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আবেদনটি শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে এই আবেদনের ওপর শুনানি হবে। উক্ত গ্রুপের করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম গতকাল বুধবার এই আদেশ দেন।

আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে এস আলম গ্রুপের বিদেশে অর্থ পাঠানোর বিষয়ে ওঠা অভিযোগের অনুসন্ধান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট গ্রুপের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। তিনি বলেন, হাইকোর্ট রুল জারির পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছিল। সেই আদেশ রুলকে অতিক্রম করে গেছে, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। আমাদের এই যুক্তি বিবেচনায় নিয়ে চেম্বার আদালত অনুসন্ধানের নির্দেশনাসংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের ওপর ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করেছে। ঐদিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে এই আবেদনের ওপর শুনানি হবে। ৪ আগস্ট একটি ইংরেজি দৈনিকে ‘এস আলমস আলাদিনস ল্যাম্প’  শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ঐ প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়ে বিদেশে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের অভিযোগ করা হয়। প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। 

ঐদিনই বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ উক্ত অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। এছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে গিয়ে দেশের বাইরে অর্থ পাঠানোর মাধ্যমে মানি লন্ডারিং হয়েছে কি না, অর্থ পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল কি না, সেই বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, সিআইডি ও দুদককে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এস আলম গ্রুপ। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কেসি, আহসানুল করিম ও সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান।

শুনানিতে এস আলমের আইনজীবীরা বলেন, পত্রিকার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কয়েকটি সরকারি সংস্থাকে অনুসন্ধানের নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। কিন্তু ঐ প্রতিবেদনের নির্ভুলতা যাচাই করার উচিত ছিল। এছাড়া আদেশে আমাকে বিবাদী করা হয়নি। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, অনুসন্ধান হলে অসুবিধা কী? পত্রিকার প্রতিবেদন সঠিক বা ভুল হতে পারে। কিন্তু হাইকোর্ট অনুসন্ধানের আদেশ দিয়ে ভুল করেছে কোথায়? আইনজীবীরা বলেন, রুল জারি করা হয়েছে। সেই রুল শুনানি না করেই অনুসন্ধানের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে আমার মৌলিক অধিকার খর্ব হয়েছে। ‘কোর্ট অব ল’ কখনো প্রসিকিউটরের ভূমিকায় যেতে পারে না।

জবাবে দুদক কৌঁসুলি বলেন, ইতিপূর্বে প্রত্যেকটি সুয়োমোটো রুলে এ ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। এই নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্ট কোনো ভুল করেনি। আদালত বলেন, যার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাকে তো বিবাদী করা হয়নি এই মামলায়। বিবাদী করার দরকার ছিল কি? দুদক কৌঁসুলি বলেন, কীভাবে করবে। যখন আদেশ দেওয়া হয়েছে তখন তো এস আলমের ঠিকানা কোর্টের সামনে ছিল না। এই মামলায় পক্ষভুক্ত হতে ইতিমধ্যে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন এস আলম। শুনানি শেষে চেম্বার আদালতের বিচারপতি অনুসন্ধানের নির্দেশনাসংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের ওপর ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থার আদেশ দেন। আদেশের পর দুদক কৌঁসুলি বলেন, এই আদেশের ফলে এস আলম গ্রুপের বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

ইত্তেফাক/এমএএম