অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেছেন, বস্তিবাসী মানুষের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় নগর দরিদ্রতাকে নির্ধারণ করতে হবে। বস্তিবাসী ও নিম্নআয়ের খানা জরিপে দেখা যায়, বস্তি ও নিম্নআয়ের বাসিন্দাদের কমপক্ষে ৮২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এখান থেকে নগর দারিদ্র্যের হিসাব করা সম্ভব। নগর জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ বস্তি ও নিম্ন আয়ের খানা। যাদের ৮২ শতাংশ দরিদ্র। এই হিসাবে নগরের দরিদ্রতার হার ৪১ নগর দারিদ্র্যতা নিরসনে সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।
সোমবার (২৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় এএলআরডি-র উদ্যোগে ‘নগর দারিদ্র্য : বস্তিবাসী ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ভূমিতে অধিকার এবং নাগরিক সেবায় অভিগম্যতা’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এ কথা বলেন।
ড. আবুল বারকাত বলেন, জরিপে পাওয়া যায়, যে নগরে দরিদ্র খানা মাত্র ৬ শতাংশের গ্রামে কিছু কৃষি জমি রয়েছে। আয় কমে যাওয়ায় প্রথম আঘাত আসে পরিবারের খাদ্য ভোগের ওপর। জরিপে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ১২ শতাংশ খানা বা পরিবার নিজেদের পরিবোরের খাদ্য নিরাপত্তা আছে বলে মনে করে। অবশিষ্ট ৮৮ শতাংশ পরিবার বাড়তি খাদ্যের ব্যয় মেটাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নগরে গড়ে ৬৫ শতাংশ খানা উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা পায়, কিন্তু নগর দরিদ্রের মাঝে এর হার মাত্র ১৬ শতাংশ।
আলোচনায় ড. শফিক উজ জামান বলেন, নগর দারিদ্র্য নিরসনে সামগ্রিক উন্নয়ন কৌশলে গুণগত ও পরিমাণগত পরিবর্তন দরকার। গ্রামীণ অঞ্চলের কর্মসংস্থান সংকটের কারণে নগরে অভিবাসন বাড়ছে। কিন্তু উদ্বৃত্ত কৃষি শ্রমিক শিল্প শ্রমিকে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়া বাংলাদেশে না থাকায় নগরায়ন না হয়ে বাস্তয়ায়ন হয়েছে। তিনি শিল্পায়নের বিকল্প কৌশল নিয়ে চিন্তা করার পরামর্শ দেন।
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, বস্তিবাসীরা আমাদের দেশের জন্য বোঝা নয়, বরং যারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে পাচার করেছে তারাই বোঝা। বস্তিবাসীদের প্রতি অন্যায় ও বৈষম্য না করে তাদের সমান সুযোগ দিলে তারাও দেশের সম্পদ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম হবেন। নগর দারিদ্র্যতা চিরস্থায়ী কোনো সমস্যা নয়, এটা পরিবর্তন সম্ভব। তাই তিনি নগর দারিদ্র্যতা নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করেন।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে অ্যাড. সুলতানা কামাল বলেন, সরকার সুশাসনের বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে অন্যান্য বিষয়গুলোতে মনোনিবেশ করছে। নীতিনির্ধারকরা যদি সচেতন থাকে এবং তাদের সদিচ্ছা থাকে তবে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মুক্ত আলোচনা অংশ নেন বরিশাল থেকে ডা. মনিষা চক্রবর্তী, রাজশাহী থেকে আফজাল হোসেন, রংপুর থেকে নূরুল ইসলাম দুলু, চট্টগ্রাম থেকে ইকবাল বাহার সাবেরি এবং ময়মনসিংহ থেকে ইমন সরকার।