যৌতুকের দাবিতে কানাডায় বসবাসরত স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ মামলায় পুলিশের পরিদর্শক পলাতক মানিকুল ইসলাম সোমবার (২৮ আগস্ট) আদালতে হাজির হলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের দায়িত্বে থাকা জেলা জজ মিজানুর রহমান ভুইঞা তাকে কারাগারে পাঠান। এ তথ্য নিশ্চিত করে এই আদালতের পিপি রাশিদা সঈদা খানম বলেন, স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন মানিকুল। তিনি সোমবার আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
যৌতুকের দাবি ৫০ লাখ টাকা দিতে অসম্মতি জানালে কানাডিয়ান সিটিজেন স্ত্রীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে মাইক্রোবাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে পালিয়ে যান পুলিশ পরিদর্শক মানিকুল। ঘটনাটি ২০১৭ সালের। ঘটনার পর মানিকুলের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন স্ত্রী। মানিকুল মামলাটি রেকর্ড না হতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেন। পরে অবশ্য মামলায় দায়ের হলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
জানা যায়, মানিকুল ইসলাম মিথ্যা তথ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কানাডা প্রবাসী এক নারী চিকিৎসককে বিয়ে করেন। বিয়ের পর স্ত্রী কানাডায় চলে যান। পরবর্তীতে মানিকুল তাকে কানাডায় নিয়ে যাওয়ার জন্য স্ত্রীকে চাপ দেন। স্ত্রী প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করে মানিকুলের কানাডার ভিসার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু মানিকুল তখন কানাডায় যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে- তিনি ঢাকা গুলশান থানায় তার পোস্টিংয়ের জন্য ৫০ লাখ দাবি করেন।
মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালের ১৮ জুন তিনি কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসলে তাকে তার বাবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে মানিকুল কালো রঙ্গের একটি গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরে যান। স্ত্রীকে সেই গাড়ি করে কিছু দূর যাওয়ার পর মানিকুল আবারও তার কাছে ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। স্ত্রী তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে মানিকুল তার হাতে থাকা ওয়্যারলেস ও মোবাইল দিয়ে ভিকটিমের নাকে-মুখে এলোপাথাড়ি আঘাত ও পায়ের বুট জুতা দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে ডান পায়ের সব আঙুল থেঁতলে দেন। এতে তার নাক-মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। কানের পর্দা ফেটে যায়। একপর্যায়ে মানিকুল তার পাসপোর্ট, ক্রেডিট কার্ড, ৫ ভরি স্বর্ণালংকার এবং ৫ হাজার কানাডিয়ান ডলার ছিনিয়ে নেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে গাড়িটি নবীগঞ্জ থানার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আউশকান্দি হিরাগঞ্জ বাজারে পৌঁছে। এ সময় মানিকুল আবার তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এ সময় তার আর্তচিৎকারে পাশ দিয়ে যাওয়া অপর একটি গাড়ি তাদের গাড়িটিকে আটকায়। এ সময় মানিকুল ভিকটিমকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। পরে উপস্থিত জনতা ভিকটিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে মানিকুলে বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দয়ের করেন।