ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে দীর্ঘ আট মাস পর ট্রেন চালু হতেই যাত্রীদের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে পাথর ছোড়া। দিনের আলোতে কিংবা রাতের অন্ধকারে, ট্রেন লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়ে যাত্রীদের গুরুতর আহত করছে দুর্বৃত্তরা। যাত্রীদের পাশাপাশি ট্রেন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা একজন লোকোমাস্টার চোখে পাথরের আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো যাত্রী পাথরের আঘাতে আহত হয়ে ফিরছেন নিজ গন্তব্যে। এমন অবস্থায় প্রতিকার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমস্যার কথা তুলে ধরছেন যাত্রীরা।
মেহেদী হাসান নামে এক যাত্রী বলেন, ‘শ্যামপুর অতিক্রম করার পর থেকে কমলাপুর যাওয়ার আগ পর্যন্ত আতঙ্কে থাকি কখন ঢিল গায়ে পড়ে। অনেক ঢিল ট্রেনের গায়ে লাগে যেটা জানালা দিয়ে প্রবেশ করে না। ইদানীং এই পথটায় জানালা নামিয়ে রাখার পরামর্শ দেই। মাঝে মধ্যেই শুনি কোনো কোনো যাত্রী ঢিলের আঘাতে কম-বেশি ব্যথা পেয়েছে। সবার তো মাথায় আঘাত লাগে এমন নয়, কারো কারো হাতে বা পিঠেও আঘাত লাগে। কম ব্যথা পাওয়ায় সেসব আলোচনায় আসে না। যারা রক্তাক্ত হয় তাদের খবরই জানাজানি হয়।’ নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আগে এতটা সমস্যা ছিল না। নতুন করে ট্রেন চালু হতেই পাথর ছোড়া আক্রমণ বেড়ে গেল। বিশেষ করে ফতুল্লা এবং গেণ্ডারিয়া এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। গেণ্ডারিয়ার উভয় পাশ থেকে এবং ফতুল্লার পূর্ব পাশ থেকে এই পাথর বেশি ছোড়া হয়। আক্রমণ দিনের তুলনায় রাতে বেশি। আমার কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী অন্তত ১৫টি পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে।’
গত ২৫ আগস্ট গেণ্ডারিয়া থেকে কমলাপুরের উদ্দেশে ট্রেন ছাড়তেই পাথরের আঘাতে আহত হন ট্রেনের লোকোমাস্টার। চোখে আঘাত পাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গেই ট্রেন থামিয়ে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কমলাপুর থেকে আরেকজন লোকোমাস্টার এসে ট্রেনটি কমলাপুর নিয়ে যান। এছাড়া মাঝে মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রেনে ছুড়ে মারা পাথরের আঘাতে যাত্রীদের রক্তাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। নারায়ণগঞ্জ জিআরপি পুলিশের উপ-পরিদর্শক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘ঠিক কতগুলো আক্রমণ হয়েছে এমন তথ্য নেই। তবে গেণ্ডারিয়ায় আক্রমণের পরিমাণ বেশি। আমাদের ধারণা ছোট বা কিশোররা বেশি ঢিল ছুড়ছে। লোকোমাস্টার আহত হওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে কমিউনিটি পুলিশ নিয়ে আমরা মিটিং করেছি। বস্তি এলাকার মানুষদের সচেতন করেছি। মূলত বাবা-মায়েরা একটু সচেতন হলে ও ছেলেমেয়েদের নজরে রাখলে এই ধরনের ঢিল ছোড়া বন্ধ হবে।’
নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সদস্য সচিব ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, ‘ট্রেনে ঢিল নিক্ষেপে যাত্রী ও রেলের চালক নিরাপত্তা হুমকির মুখে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশু-কিশোরেরা এই কাজটি করে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেতনতায় জোর দেওয়ার পাশাপাশি কিশোর আইন প্রয়োগে মনোযোগ দেওয়া উচিত। যেসব এলাকায় এই ধরনের আক্রমণ বেশি হয় সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা একটু টহল দিলেই শনাক্ত করতে পারবেন কারা এই কাজ করে। তবে রেললাইনের পাশের বসতবাড়িতে লিফলেট বিতরণ, কমিউনিটি সভা করে এর ঝুঁকি তুলে ধরা হলে এই ঢিল ছোড়ার প্রবণতা কমে আসবে।’