দুই দশক আগে জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের মহেশপুর গ্রামে জেএমবির প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পুলিশের অভিযানের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী পুলিশের এসআই শফিকুল ইসলামের চাকরিচ্যুতির আদেশ এখনো বহাল রয়েছে। তার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা রিভিউ আবেদনের শুনানি আটকে রয়েছে ১০ বছর ধরে। এ অবস্থায় চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য এসআই শফিকুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজির কাছে লিখিত আর্জি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ১৪ আগস্ট গভীর রাতে জয়পুরহাট সদর থানার ওসি ইকবাল শফি ও এসআই শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম পাশের থানা ক্ষেতলালের মহেশপুর গ্রামের মন্তেজারের বাড়ি ঘেরাও করে। পুলিশের কাছে খবর ছিল, ঐ বাড়িতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চলছে। গভীর রাতে মন্তেজারের বাড়ির প্রাচীর টপকে প্রবেশ করে দরজা খুলে দেন এসআই শফিকুল ইসলাম। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। মাত্র ১২ জন পুলিশ সদস্যের থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও দুটি শটগান দিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী জঙ্গিদের সঙ্গে গোলাগুলি হয়। জঙ্গিদের গুলিতে দুই কনস্টেবল আহত হলে জঙ্গিরা তাদের শটগান ছিনিয়ে নেয়। পরে পুলিশ জেএমবির সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সালাউদ্দিন, সালেহীনসহ ৩৩ জন শীর্ষ জঙ্গি নেতাকে গ্রেফতার করে। ঘটনার সময় জেএমবির প্রধান সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই পালিয়ে যান। পরে ক্ষেতলাল থানায় এসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে জেএমবির ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলা দায়েরের দুই দিন পর কারাবন্দি জেএমবির ৩৩ জনের সঙ্গে বাংলা ভাই দেখা করতে গেলে জেলগেট থেকে তাঁকেও গ্রেফতার করেন এসআই শফিকুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনাটি সে সময় দেশে-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও কয়েক দিনের মধ্যে প্রেক্ষাপট বদলে যায়। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে অস্ত্র হারানোর অপরাধে দুই কনস্টেবলকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু তাদের বাড়ি বগুড়া জেলায় হওয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই চাকরি ফিরে পান। অন্যদিকে জয়পুরহাট সদর থানার ওসি ইকবাল শফির ওয়াকিটকি হারানোর অপরাধে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হলেও তা থেকে তিনি খালাস পান। তবে মামলার বাদী এবং জেলগেট থেকে বাংলা ভাইকে গ্রেফতার করার কারণে এসআই শফিকুল ইসলামকে কয়েক দিনের মধ্যে তার পঞ্চগড়, খাগড়াছড়ি ও ডিএমপিতে একই সঙ্গে বদলির আদেশ হয়। জয়পুরহাট জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল মণ্ডল এসআই শফিকুলের এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন) খাতায় ‘ব্ল্যাক মার্ক’ দিয়ে ডিএমপিতে পাঠান। তিনি ডিএমপির মিরপুর থানায় যোগদান করেন। ঐ সময় মিরপুর থানার ওসি ছিলেন ইন্তেজার রহমান, যিনি ঢাকাস্থ বগুড়া জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
২০০৪ সালের ১৮ জুন মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের এক আত্মীয়ের চাহিদামতো মিরপুরের ওসি ইন্তেজার রহমান একটি পাঁচতলা বাড়ির দখল বুঝিয়ে দেন। বাড়িটির প্রকৃত মালিক ছিলেন একজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। পরে ওসির বিরুদ্ধে বাড়ি দখলের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ওসি এবং এলাকার টহল অফিসার হিসেবে এসআই শহীদুল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করা হয়। এসআই শহীদুল হক ছিলেন তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর চাচাতো ভাই। কমিটির সুপারিশমতে, এসআই শহীদুল হকের একটি ইনক্রিমেন্ট কর্তন করে দেওয়া হয়। কিন্তু ওসির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রায় ১০ মাস পর ওসি ইন্তেজার রহমান তত্কালীন ডিসি (পশ্চিম) মাজহারুল হকের (পরে চাকরিচ্যুত) কাছে এসআই শফিকুলকে জড়িয়ে বক্তব্য দিয়ে ঐ অভিযোগ থেকে অব্যাহতি নেন।