টাঙ্গাইলের সখীপুর-কালিহাতী সড়কের উপজেলার বহেড়াতৈল এলাকায় নির্মাণাধীন একটি সেতুর পাশে বিকল্প বেইলি সেতুটি বর্ষায় তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় মাসেক খানি ধরে ওই সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। এতে ওই সড়কে যাতায়াতকারীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য ওই বিকল্প বেইলি সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। ওই সাঁকোটি নিজ অর্থায়নে তৈরি করে দিয়েছেন তরুণ আইনজীবী রাসেল রানা। তিনি বহেড়াতৈল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
জানা যায়, ওই সড়কের বহেড়াতৈল বাজারের পশ্চিম পাশে ৪০ মিটারের আরসিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ করছেন মেসার্স হাসান টেকনো লিমিটেড নামের সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সাত কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আট মাস আগে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। পুরোনো সেতু ভাঙার আগেই সেতুর পাশে বিকল্প বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। নির্মাণাধীন সেতুর পাশে বিকল্প সেতু দিয়েই যানবাহন চলাচল করছিল। গত প্রায় মাসেক খানি আগে থেকেই ভারী বর্ষণ শুরু হলে ওই বিকল্প সেতুটি পানিতে তলিয়ে যায়। এরপর থেকে ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরপরও কিছু কিছু যানবাহন অতি ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বেশিরভাগ যানবাহন ১৫-২০ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন এই পথে চলাচলকারী স্থানীয় লোকজন, পথচারী ও শিক্ষার্থীরা। এদের কথা ভেবে স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ আইনজীবী রাসেল রানা নিজ অর্থায়নে পানিতে তলিয়ে যাওয়া ওই বিকল্প বেইলি সেতুর ওপর পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দিয়েছেন। গত সোমবার ও মঙ্গলবার এই দুই দিনে সাঁকোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন সেতুর পাশের বিকল্প বেইলি সেতু ডুবে যাওয়ায় তার ওপর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। ওই স্থানে তিনটি অংশে ভাগ করে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। সড়কের পূর্ব পাশ থেকে বেইলি সেতুতে উঠতে একটি সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। সড়কের পশ্চিম পাশ থেকেও অনুরূপ আরেকটি সাঁকো বেইলি সেতুতে উঠেছে। আবার আরেকটি সাঁকো করা হয়েছে বেইলি সেতুর ওপর। বাঁশের সাঁকোর তিনটি অংশের দৈর্ঘ্য আনুমানিক ১০০ ফুট। মোটরসাইকেল আরোহীদের ঝুঁকি নিয়েই পানি দিয়েই পার হতে দেখা যায়।
রফিকুল ইসলাম নামের একজন মোটরসাইকেল চালক বলেন, আমার বাড়ি পাশের গ্রামেই। দুই কিলোমিটারের জন্য আমাকে কমপক্ষে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হবে। তাই ঝুঁকি নিয়েই পার হচ্ছি।
বহেড়াতৈল গণ উচ্চ বিদ্যালয়েরর প্রধান শিক্ষক সাদিকুল ইসলাম বলেন, গত প্রায় মাসেকখানেক ধরে বেইলি সেতুটি ডুবে যাওয়ায় আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ ছিল। রাসেল রানা নামের একজন আইনজীবী সাঁকো তৈরি করে দেওয়ায় ছেলে-মেয়েরা এখন স্কুলে আসতে পারছেন।
বহেড়াতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী বলেন, বাঁশের সাঁকো নির্মাণ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখন পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে আসতে পারছে। অন্যথায় পশ্চিম অংশের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ হয়ে যেতো।
বহেড়াতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ হোসেন বলেন, ওই সড়ক দিয়ে সাধারণ মানুষ ও যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করার দায়-দায়িত্ব হচ্ছে ঠিকাদারের। কিন্তু ঠিকাদার এগিয়ে না আসায় এ গ্রামেরই বাসিন্দা রাসেল রানা নিজ উদ্যোগে সাঁকো তৈরি করে দিয়েছেন। এজন্য তিনি প্রশংসার দাবিদার।
তরুণ আইনজীবী রাসেল রানা বলেন, নির্মাণাধীন সেতুর পাশে ঠিকাদারের করা বিকল্প সেতুটি ডুবে যাওয়ায় এ সড়ক দিয়ে চলাচলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন লোকজন। গত ২৭ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইনে ‘টাঙ্গাইলে বিকল্প সড়কও বিকল, সীমাহীন দুর্ভোগ’ শিরোনামের খবর তার নজরে পড়ে। আমি টাঙ্গাইল থেকে এসে পথচারী-শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে নিজের অর্থায়নে বিকল্প বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দিয়েছি। এখন নিদেনপক্ষে পায়ে হেঁটে মানুষ চলাচল করতে পারছেন।
সেতু নির্মাণকাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সোহেল রানা জনি বলেন, বর্ষার পানির কারণে সেতুর কাজ বন্ধ আছে। পানির স্রোত থাকায় এখন কাজটি করা যাচ্ছে না। দুর্ভোগ কমাতে ডাইভারশন (বিকল্প চলাচল) সড়কটি অল্প সময়ের মধ্যে উচুঁ করে দেওয়া হবে।
সওজের মির্জাপুর উপবিভাগীয় প্রকৗশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, কার্যাদেশ অনুযায়ী সেতুটির নির্মাণ কাজের এখনও অনেক সময় রয়েছে। পানির স্রোত কমে গেলে বা সুবিধাজনক অবস্থায় বিকল্প সড়ক ও বেইলি সেতু উঁচু করে নির্মাণ করে দিতে ঠিকাদারকে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।