‘বঙ্গবন্ধুর খুনিরা আমার বোন শেখ হাসিনার আশেপাশেই আছে’ বলে মন্তব্য করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে জুতা বানাইছে আর বঙ্গবন্ধুকে যারা খুন করেছে তারাও আমার বোন শেখ হাসিনার আশেপাশেই আছে। আমি কিছুই করতে পারি না। কিন্তু আমার এলাকার একজন শিশু মারা যাবে, আর পুলিশ ভুঁড়ি ভাসাইয়া হাঁটবে- এটা হতে পারে না। সেই পুলিশদের এখানে (সখীপুরে) থাকার দরকার নেই।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার দাড়িয়াপুর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী অপহরণের পর খুন হওয়া সামিয়ার বাবা-মা ও স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি তো এমন দেশ চাই না। আমি সেই দেশ চেয়েছি, যেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা থাকবে। নিহত সামিয়ার বাবা আসামিদের নাম দিলেও পুলিশ কেন গত ছয় দিনেও আসামি ধরতে পারল না এর জবাব পুলিশকে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমার বোন শেখ হাসিনার যেমন নিরাপত্তা দরকার, তেমনি সামিয়ার মা-বাবারও নিরাপত্তা দরকার।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. জোয়াহেরুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবীর বলেন, জোয়াহের তুমি এমপি এখন, তুমি যদি ভালোভাবে ডিউটি করতে না পারো, তাহলে তোমারও কিন্তু বিচার হবে। জোয়াহের তোমাকে সাত দিন সময় দেওয়া হল। আমি এ নির্মম, নিষ্ঠুর হত্যার কঠোর বিচার চাই।
নিহত শিশু সামিয়ার বাবা রঞ্জু মিয়া ও মা রুপা আক্তারের মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেন তিনি। এ সময় এক হৃদয় বিদারক ঘটনার অবতারণা হয়। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক, সখীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সানোয়ার হোসেন সজীব, সানোয়ার হোসেন মাস্টারসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
এর আগে গত বুধবার সকাল ৭টায় ওই ছাত্রী বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। প্রাইভেট পড়া শেষ হলে সহপাঠীদের সঙ্গে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বের হয়। পথে একটি দোকানে সহপাঠীরা কেনাকাটা করতে দাঁড়ালে একাই মেয়েটি বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। এদিকে বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় মা রুপা বেগম শিক্ষককে ফোন দিয়ে জানতে পারেন মেয়ে অনেক আগেই চলে গেছে। পরে মা মেয়েকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন। বাড়ির কাছাকাছি একটি স্থানে মেয়ের ব্যবহৃত জুতা পড়ে থাকতে দেখেন। এর কিছুক্ষণ পর তার মোবাইল ফোনের ইমো অ্যাপসে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি অডিওবার্তা আসে।
অডিওবার্তায় বলা হয়, ‘আসসালামু আলাইকুম। আপনার মেয়ে ভালো আছে। টাঙ্গাইলে আছে, আজকের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা দিলে মেয়ে পাবেন। বিষয়টি পুলিশ ও এলাকার কাউকে জানাবেন না। জানালে আপনার মেয়ের ক্ষতি হবে।’ এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা রঞ্জু মিয়া বৃহস্পতিবার সখীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ওই অডিও বার্তা পাওয়াার ৪৮ ঘন্টা পর গত শুক্রবার দুপুরে পুলিশ বাড়ির পাশের একটি গহীন বনের পাশে মাটি থুঁড়ে সামিয়ার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে।
গত ৬ দিনেও এ শিশু হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিষয়ে জানতে চাইলে সখীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন মঙ্গলবার বিকালে বলেন, আমরা হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের আরও কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে।