‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে।’ (সুরা হুমাজাহ-১) অর্থাৎ যারা নিন্দা করে, গিবত করে, তাদেরকে এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কঠিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আইয়ামে জাহিলিয়া যুগে আরবের লোকেরা একে অপরের সমালোচনা ও নিন্দা করত, তাদের ভেতরে নম্রতা ও ভদ্রতা কিছু ছিল না। কুখ্যাত কাফের উবাই ইবনে খলফ প্রিয় নবী (সা.) ও মুসলমানদেরকে নিন্দা করতো। কাফের আখনাস ইবনে শোরায়েব ও মুগিরা ইবনে ওয়ালিদ মুসলমানদের সমালোচনা করতো। আস-ইবনে ওয়ায়েল প্রিয় নবিজির নামে মিথ্যা অপবাদ দিতো। বর্তমানে গ্রাম কিংবা শহরে চায়ের দোকানে ও হাটবাজারে দেখা যায়, একে অপরের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। কেউ সামনে সমালোচনা করে আবার কেউ পেছনে সমালোচনা করে। যারা পরনিন্দা করে তাদেরকে ‘হুতামা’ নামক জাহান্নামে জ্বালানো হবে ও তাদের হাড় ভেঙেচুরে চুরমার করে দেওয়া হবে।
আল্লাহ বলেন, ‘কখনো না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়।’ (সুরা হুমাজাহ-৪) এটি হলো ভয়াবহ ও লেলিহান শিখাযুক্ত আগুন, সমালোচক ও নিন্দুকদের এই আগুনে পোড়ানো হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হুতামা কী, তা কি তুমি জানো? এটা আল্লাহর প্রজ্বলিত হুতাশন।’ (সুরা হুমাজাহ : ৫-৬) নিন্দুকদের প্রজ্বলিত মুকাদাহ আগুনে নিক্ষেপ করা হবে, এ আগুন সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ১ হাজার বছর এ আগুনকে জ্বালানো হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তা লাল রঙ ধারণ করেছে। তারপর আবার ১ হাজার বছর এ আগুনকে উত্তাপ দেওয়া হয়েছে, ফলে তা সাদা হয়ে গেছে। অতঃপর পুনরায় ১ হাজার বছর উত্তাপ দেওয়া হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তা কালো হয়ে গেছে। এখন তা মারাত্মক কালো রঙ ধারণ করে আছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই ঐটি তাদের পরিবেষ্টন করে রাখবে।’ (সুরা হুমাজাহ-৮)
যারা নিন্দুক তাদেরকে অগ্নি চারদিক থেকে ঘিরে রাখবে, তাদেরকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপের পরে চিরদিনের জন্য তার দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে, ফলে তারা তা থেকে বের হতে পারবে না এবং দোজখের উত্তাপ থেকেও বের হতে পারবে না। এক পর্যায়ে লৌহ নির্মিত সিন্দুকের মধ্যে বন্ধ করে রাখা হবে। এরপর সে সিন্দুককে বন্ধ করে দোজখের নিম্নদেশে নিক্ষেপ করা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘায়িত স্তম্ভগুলোয়’। (সুরা হুমাজাহ-৯) আল্লাহ আমাদের সব ধরনের নিন্দা ও অন্যের অযথা সমালোচনা করা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
লেখক: আলেম ও প্রাবন্ধিক