শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৭ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা

আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৫৭

টানা দ্বিতীয়বারের মত এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। সুপার ফোরে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বৃষ্টি আইনে পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ফাইনালে শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষ ভারত। সুপার ফোরের ৩ খেলায় ২ জয় ও ১ হারে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিলো লঙ্কানরা। ২ খেলায় ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে ইতোমধ্যে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। ৩ খেলায় ১ জয় ও ২ হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়স্থান থেকে  এবারের এশিয়া কাপ শেষ করলো গতবারের রানার আপ পাকিস্তান। ২ খেলায় ২ হারে পয়েন্ট শূন্য থেকে টুর্নামেন্ট থেকে আগেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ।

কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হতে সোয়া দুই ঘণ্টা দেরি হলে ম্যাচটি ৪৫ ওভারে নির্ধারিত হয়। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন আনা পাকিস্তান। ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। পঞ্চম ওভারে পেসার প্রমোদ মদুশানের বলে বোল্ড হন ৪ রান করা ওপেনার ফখর জামান।

শুরুতে উইকেট হারানোর ধাক্কা ভুলিয়ে দেন আরেক ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও অধিনায়ক বাবর আজম। দ্বিতীয় উইকেটে ৭০ বলে ৬৪ রান যোগ করেন তারা। ১৬তম ওভারে বাবরকে তুলে নেন আগের ম্যাচে ভারতকে ধসিয়ে দেয়া স্পিনার দুনিথ ওয়েলালাগে। ৩টি চারে ২৯ রান করেন বাবর। অধিনায়কের বিদায়ের পর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শফিক। অর্ধশতকের পর ৫২ রানেই থেমে যান তিনি। ৬৯ বল খেলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন শফিক।  
পাঁচ নম্বরে নামা মোহাম্মদ হারিস ৩ রানে আউট হলে ২৪তম ওভারে ১০৮ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় পাকিস্তান। ২৮তম ওভারে আবারও বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। প্রায় ৩০ মিনিট খেলা বন্ধ থাকায় আরও ৩ ওভার কমে যায়। অর্থাৎ, ৪২ ওভারে নির্ধারিত হয় ম্যাচটি।

দ্রুত সেট হয়ে পঞ্চম উইকেটে শ্রীলঙ্কার বোলারদের ওপর চড়াও হন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ। ৩২ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ছিলো ৫ উইকেটে ১৫০। রিজওয়ান-ইফতিখারের ঝড়ো জুটিতে শেষ ১০ ওভারে ১০২ রান পায় পাকিস্তান। জুটিতে ৭৮ বলে ১০৮ রান যোগ করেন তারা। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ বলে ৪৭ রানে আউট হন ইফতিখার।

ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে পাকিস্তানকে নির্ধারিত ৪২ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫২ রান এনে দেন রিজওয়ান। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৩ বলে অপরাজিত ৮৬ রান করেন ওয়ানডেতে ১২তম হাফসেঞ্চুরি পাওয়া রিজওয়ান। শ্রীলঙ্কার হয়ে পাথিরানা ৬৫ রানে ৩ উইকেট নেন।

পাকিস্তান ২৫২ রান করার পরও ম্যাচ জিততে বৃষ্টি আইনে ৪২ ওভারে ২৫২ রানই টার্গেট পায় শ্রীলঙ্কা। রান তাড়া করতে নেমে দ্রুত রান তুলতে থাকেন দুই বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা কুশল পেরেরা। পাকিস্তানের পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদিকে ৩টি ও অভিষিক্ত জামান খানকে ১টি চার মারেন পেরেরা। চতুর্থ ওভারে সতীর্থ পাথুম নিশাঙ্কার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন ৪ বাউন্ডারিতে ৮ বলে ১৭ রান করা পেরেরা।

২০ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। পাওয়ার প্লের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ৬০ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন তারা। স্পিনার শাদাবের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ২৯ রানে নিশাঙ্কা ফিরলে ভেঙ্গে যায় জমে ওঠা জুটি।দলীয় ৭৭ রানে নিশাঙ্কার বিদায়ে ক্রিজে আসা সাদিরা সামারাবিক্রমা অন্য প্রান্তে মেন্ডিসকে নিয়ে পাকিস্তানের বোলারদের সামনে দাপট দেখিয়েছেন । বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলে জুটিতে ১শ পূর্ণ করেন তারা। এই জুটিতেই ৪৭ বলে ওয়ানডেতে ২৪তম হাফসেঞ্চুরির দেখা পান মেন্ডিস।

মেন্ডিস পারলেও, হাফসেঞ্চুরি বঞ্চিত হন সামারাবিক্রমা। ৫১ বলে ৪টি চারে ৪৮ রান করা সামারাবিক্রমাকে শিকার করে পাকিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার ইফতিখার। পাকিস্তান যখন ব্রেক-থ্রু পায় তখন ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ৭৪ বলে ৭৫ রান দরকার পড়ে শ্রীলঙ্কার। চতুর্থ উইকেটে চারিথ আসালঙ্কাকে নিয়ে ৩৩ বলে ৩৩ রান তুলে দলকে জয়ের পথে রাখেন মেন্ডিস। সেইসঙ্গে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। কিন্তু ৩৬তম ওভারে ইফতিখারের প্রথম বলে হারিসের দুর্দান্ত ক্যাচে টুর্নামেন্টে আরও একবার নাভার্স নাইন্টিতে আউট হন মেন্ডিস। ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৭ বলে ৯১ রান করেন তিনি। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৯২ রানে আউট হয়েছিলেন মেন্ডিস।

এরপর দাসুন শানাকার সঙ্গে ১২ ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে ২১ রান যোগ করেন আসালঙ্কা। শেষ ১২ বলে ৫ উইকেট হাতে রেখে ১২ রান দরকার পড়ে শ্রীলঙ্কার। ৪১তম ওভারে ৪ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন আফ্রিদি। শেষ ওভারে জিততে ৩ উইকেট হাতে রেখে ৮ রানের সমীকরণ পায় শ্রীলঙ্কা।

জামানের করা শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে ২ রান পায় শ্রীলঙ্কা। চতুর্থ বলে রান আউট হন মদুশান। পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মারেন আসালঙ্কা। শেষ বলে ২ রানের প্রয়োজন মিটিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ফাইনালে তুলেন আসালঙ্কা। ৪২ ওভারে ৮ উইকেটে ২৫২ রান করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে শ্রীলঙ্কা। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৭ বলে অপরাজিত ৪৯ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেন আসালঙ্কা। পাকিস্তানের ইফতিখার ৩টি ও আফ্রিদি ২ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন শ্রীলঙ্কার মেন্ডিস। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর এই ভেন্যুতেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা।

ইত্তেফাক/জেডএইচ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন