আদালতের নিষেধাজ্ঞা দিয়েও জমি দখল ঠেকানো যাচ্ছে না। সোনারগাঁওয়ের জামপুর ইউনিয়নের ওটমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিমালিকানার জমি দখল করে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছে। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ঐ জমির মালিক সেলিম ভূঁইয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ঐ নির্মাণকাজের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তার পরও নির্মাণকাজ বন্ধ হয়নি। গত কয়েক দিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ব্যক্তিমালিকানার জমি জোরপূর্বক দখল করে এই নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় সম্প্রতি জমির মালিক শহীদুল্লাহ টিটু ও নজরুল ইসলাম স্বপন স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে সোনারগাঁও উপজেলা চেয়ারম্যান, সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্তকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
জানা যায়, উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের ওটমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে শহিদুল্লাহ গং পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২০ শতাংশ জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছে। ঐ জমিতে তারা বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ রোপণ করে। সেই গাছ কেটে ওটমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জরিনা বেগম, স্থানীয় প্রভাবশালী লিপন চৌধুরী, লিটন চৌধুরী, জিসান চৌধুরী, আওলাদ চৌধুরী, দেওয়ান কামালসহ ১০-১২ জনের একটি দল সেই গাছ কেটে জমি দখল করেন। দখল করা জমিতে পাকা সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ শুরু করেন তারা। শহিদুল্লাহর বড় ভাই মো. সেলিম ভূঁইয়া বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত বিবাদীদের তলব করে। আদালতের তলবে সাড়া না দিয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ চালিয়ে যান তারা।
এ ঘটনায় গত ১১ জুলাই ও ৩০ আগস্ট দুই দফায় নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ মোহসিনা ইসলামের আদালত নির্মাণকাজে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। অথচ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক জরিনা বেগম। আদালতের আদেশ অমান্যের বিষয়ে সোনারগাঁও থানার পুলিশও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত জরিনা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আদালতের নোটিশ পেয়েছি। নির্মাণকাজ চলমান থাকায় বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। তবে সীমানাপ্রাচীরের কাজ টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হচ্ছে, তাই বন্ধ রাখা সম্ভব নয়।’ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সোনারগাঁ উপজেলা প্রকৌশলী আরজুরুল হক বলেন, ‘আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। জমিটি ছেড়ে অন্য জায়গায় কাজ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
সোনারগাঁও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. দৌলতর রহমান বলেন, আদালতের প্রতি অনুগত থাকতে হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রধান শিক্ষককে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে বারণ করা হয়েছে। সোনারগাঁও থানার পরিদর্শক তদন্ত মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ নির্মাণকাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজওয়ান উল ইসলাম বলেন, স্কুলের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ বন্ধের বিষয়ে দুই ব্যক্তি এসেছিলেন। সঙ্গে আদালতের নিষেধাজ্ঞাও এনেছিলেন। তাদের বিষয়টি সমাধানের জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।