বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

নির্দেশ অমান্য করে গাছে ব্যানার সাঁটাচ্ছেন রাবি ছাত্রলীগের পদ-প্রত্যাশীরা

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:১২

আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২৬ তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন পদপ্রার্থী নেতা ও তাদের কর্মীরা। ইতোমধ্যে পোস্টার, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে ছেয়ে গেছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো সাঁটাতে ব্যবহার করা হচ্ছে গাছগুলোকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে মাইকিং ও পোস্টারিং করে গাছে পেরেক ঠোকাতে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও পদ-প্রত্যাশী নেতারা তা পাত্তাই দিচ্ছেন না। গাছে প্ল্যাকার্ড ও  ব্যানার সাঁটিয়ে গাছের জীবন চক্র ধংসযজ্ঞে মেতে উঠেছে পদ-প্রত্যাশী নেতারা।

এদিকে গাছে পেরেক বিদ্ধ করে সাইনবোর্ড না লাগাতে ২০০২ সালের ৭ জুলাই জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়। কিন্তু বাস্তবে সে আইনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ।

সিটি করপোরেশন আইনে ১৯৯০ এর ৯২ ধারার ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যত্রতত্র পোস্টার-ব্যানারসহ প্রচারপত্র সেঁটে দেওয়া এবং গাছে সাইনবোর্ড লাগানো দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইনের আওতায় ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধানও আছে। আইন থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ দেখেননি কেউ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কের পাশের গাছগুলোতে পেরেক ঠুকে সম্মেলনের ব্যানার সাঁটাতে দেখা গেছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত মঙ্গলবার ক্যাম্পাসের গাছে পেরেক ঠুকে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো থেকে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলকে বিরত থাকতে প্রচারণা চালায়। তবে এতে কর্ণপাত করেনি কোন পদপ্রার্থী নেতা। নিঃসংকোচে গাছে ঝোলাচ্ছেন ফেস্টুন-ব্যানার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট থেকে শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের গেট পর্যন্ত প্যারিস রোডের গনগনশিরিশ গাছে, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনের দেবদারুগাছ গুলোসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান জায়গায়গুলোর প্রায় প্রতিটি গাছে পেরেক মেরে সাইনবোর্ড সাঁটিয়েছেন সম্মেলনে পদ-প্রত্যাশীরা। এতে গাছগুলো মৃত্যু-ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্যারিস রোডের গাছে সাইনবোর্ড ঝুলছে ছাত্রলীগের কর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বদেশ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাবিরুজ্জামান রুহুল, শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু প্রমুখ।

সাইনবোর্ড সাঁটানোর বিষয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যে নির্দেশনা দিয়েছে সেটা জানতাম না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেহেতু নির্দেশনা দিয়েছেন। আমি সাইনবোর্ডগুলো দ্রুত তোলার ব্যবস্থা করবো।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রাজশাহী জেলার সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, গাছের জীবনকে নষ্ট করার অধিকার কোনো ব্যক্তির নেই। এখানে সচেতনতার বড় অভাব রয়েছে। সরকার আইন করেছে কিন্তু আইনকে যারা বাস্তবায়ন করবে তারা সঠিকভাবে সেটা পালন করছে না। কোনোভাবেই এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে না। যদি সকলকে সচেতন করা যায় তাহলে আগামী দিনে গাছ নিধন কমে আসবে বলে তিনি মনে করছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম কবির দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, গাছে পেরেক ঢুকানো একদম ঠিক না। পেরেক ঢুকানোর ফলে গাছ ব্যথা পায়। গাছ অস্বস্তি প্রকাশ করে। আমাদের যেমন নার্ভাস সিস্টেম আছে গাছেরও তেমন সিস্টেম কাজ করে। গাছ কথা বলতে পারে না তাই এভাবে হাজার কষ্ট সহ্য করে।

তিনি আরো বলেন, পেরেক ঢুকানোর ফলে গাছ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। পেরেক একবার ঢুকালে সেখানে গর্ত হয়ে থাকে। পরে সেই গর্তে নানান রকমের জীবাণু প্রবেশ করে। অনেক গাছ সেই জীবাণুগুলো সহ্য করতে পারে না। তখন গাছের গায়ে টিউমার হয়ে যায়। একপর্যায়ে গাছগুলো মারা যায়। মানুষকে উৎসাহিত করা উচিৎ যেন গাছে পেরেক না মারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম দৈনিক ইত্তেফাককে  বলেন, গাছগুলো বাঁচাতে আমরা যদি একে অপরের সহযোগিতা না করি তাহলে তো গাছগুলোর ক্ষতি হবেই। এই ক্ষতিটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের হবে না ক্যাম্পাসের প্রতিটা মানুষের জন্য ক্ষতি। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি গাছগুলোতে দরকার হলে দড়ি বা তাড় দিয়ে বেধে সাইনবোর্ডগুলো লাগাতে বা ফ্রেম তৈরি করেও যাত ধরনের প্রচারণা চালানো দরকার তারা করুক। সবার উচিত গাছগুলোকে বাঁচানো। 

নির্দেশনার পরেও গাছগুলোতে ঝুলাচ্ছে ব্যানার। এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনদিন আগে এই কথাগুলো জেনে আমি প্রক্টর, ছাত্রউপদেষ্টাকে এবিষয়ে খবর নিতে বলেছি। বর্তমানে ক্যাম্পাসের বাহিরে আছি। এসে দুই-একদিনের মধ্যে যারা গাছে সাইনবোর্ডগুলো লাগাচ্ছে আমরা তাদের সাথে বসবো। 

ইত্তেফাক/এআই