রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২৬ তম সম্মেলন আগামীকাল। শীর্ষ দুই পদ—সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য সিভি জমা দিয়েছেন ৯৪ জন পদপ্রত্যাশী নেতা। এদের মধ্যে সিংহভাগই স্থানীয়।
সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই শোডাউন করছেন পদপ্রত্যাশী বেশ কয়েকজন নেতা। এদের মধ্যে, সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন সর্বমোট আটজন নেতা।
স্থানীয়দের মধ্যে নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে আছেন: কাজী আমিনুল হক (লিংকন)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেহেরচন্ডি এলাকার বাসিন্দা। অন্যদিকে আরেক আলোচিত পদপ্রত্যাশী নেতা শাহিনুল ইসলাম সরকার ডনের বাসা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বুধপাড়ায়। ক্যাম্পাসে ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে সবচেয়ে বেশি শোডাউন করছেন আসাদুল্লা-হিল-গালিব। জানা গেছে, নওগাঁয় তার গ্রামের বাসা হলেও দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ক্যাম্পাস সংলগ্ন কাজলা এলাকায় বসবাস করছেন।
রাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের জন্য মেহেদী হাসান মিশুর নামটিও বেশ আলোচিত হচ্ছে। মিশুর বাসা রাজশাহীর কাটাখালী পৌর এলাকায়। শীর্ষ পদপ্রত্যাশী সাকিবুল হাসান বাকির বাসা ক্যাম্পাসঘেঁষা বিনোদপুরে।
জানা গেছে, রাবি ছাত্রলীগের স্থানীয় এই নেতারা নতুন কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বে আসার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে যোগাযোগের পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছেও প্রতিনিয়ত ধর্না দিচ্ছেন পদপ্রত্যাশী এই নেতারা।
রাজশাহীর বাইরের নেতাদের মধ্যে যাদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে তারা হলেন: মেজবাহুল ইসলাম; তারা বাসা দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায়। তাওহীদুল ইসলাম দূর্জয়ের বাসা কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায়। মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর বাসা জয়পুরহাট সদর উপজেলায়। ফয়েজ আহমেদের বাসা সিলেটে। এছাড়া আরও তিন-চারজন পদপ্রত্যাশী রয়েছেন যারা রাজশাহীর বাইরের নেতা হিসেবে রাবি ছাত্রলীগের শীর্ষপদে আসতে আগ্রহী।
পদপ্রত্যাশী নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক (লিংকন) বলেন, 'দীর্ঘদিন পর রাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন হচ্ছে। চতুর্দিকে নানা কথাই শোনা যাচ্ছে, আমরা সেসবে কান দিচ্ছিনা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং এই সংগঠনের অভিভাবকরা যাদেরকে যোগ্য মনে করেন, নতুন নেতৃত্বে তারাই আসবে।'
চিরায়ত ধারার পরিবর্তন প্রত্যাশা করে রাবি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম দূর্জয় বলেন, 'রাবি ক্যাম্পাসের ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী রাজশাহীর বাইরে থেকে পড়াশুনা করতে আসে। আমি মনে করি, রাবি ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে হলে, অন্তত একটি পদ বাইরে থেকে দেওয়া উচিত। এই ধারাটি একবার শুরু হলে সাংগঠনিক কার্যক্রমেও গতি আসবে।'
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে বরাবরই রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের একটা প্রকট প্রভাব লক্ষ করা যায়। গুঞ্জন আছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একটি সাংগঠনিক ইউনিট হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতেই রাবি ছাত্রলীগের ভাগ্য নির্ধারিত থাকে। ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০০ সালের পর থেকে রাবি ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থানীয়দেরকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রাজশাহীর বাইরে থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী পড়াশুনা করতে আসে, সেই সাথে অনেকেরই স্বপ্ন থাকে ছাত্ররাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়ার। কিন্তু স্থানীয়দের দাপটে রাবি ছাত্রলীগ অনেকটাই রাজশাহী-কেন্দ্রিক; যার ফলশ্রুতিতে বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রাবি ক্যাম্পাস থেকে তৈরি হয়নি কোনো জাতীয় নেতৃত্ব।
রাবি ছাত্রলীগে স্থানীয় নেতাদের প্রাধান্য দেওয়ার প্রসঙ্গে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হোসাইন বিপু বলেন, 'কে স্থানীয়, আর কে বাইরের এই আলোচনাটাই আসা উচিত নয়। যাদের যোগ্যতা আছে, কর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা আছে—তাদেরকেই নেতা নির্বাচন করতে হবে। সেক্ষেত্রে কারও বাসা রাজশাহীতে হলেই সে বাড়তি সুবিধা পাবে; আর রাজশাহীর বাইরে হলে গুরুত্ব থাকবে না—এমনটা হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়।'
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন রাবি ইউনিটের নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রসঙ্গে বলেন, 'স্থানীয় বা অস্থানীয় নয়; আমরা মনে করি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের কাছে যারা গ্রহণযোগ্য; শিক্ষার্থীদেরকে সাথে নিয়ে একটি আধুনিক ও স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য যাদের দক্ষতা, ব্যক্তিত্ব ও স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে এবং যারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আপসহীন দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলবে—তারাই রাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসবে।'