রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসংযোগ, বিএনপির ‘চূড়ান্ত’ আন্দোলন

আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:২৭

সরকার পতনের সর্বাত্মক কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি। সোমবার‘ যুগপৎ আন্দোলনের’ কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি। মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে তাদের আন্দোলন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ শুরু করছে নির্বাচনী জনসংযোগ।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করাতে চায়। কেননা তফসিল ঘোষণার পর সবাই নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে তখন আন্দোলন জমানো কঠিন হয়ে পড়বে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সারাদেশে নির্বাচনী জনসংযোগ শুরু করতে যাচ্ছে যা, মঙ্গলবার থেকেই শুরু হতে পারে। তবে সোমবার বিএনপি কী কর্মসূচি ঘোষণা করে সেটা দেখে তারা নতুন কর্মসূচিও দেবে বলে জানা গেছে।

বিএনপির ‘যুগপৎ’ আন্দোলন পরিকল্পনা

সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। আর এই কর্মসূচি হতে পারে প্রথম দফায় ১৫ দিনের জন্য। মঙ্গলবার শুরু হয়ে তা চলবে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত।

রোববার তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হয়েছে বিএনপির। নতুন কর্মসূচিতে বড় চার-পাঁচটি বড় সমাবেশ ছাড়াও থাকবে রোডমার্চ। তারা এই ১৫ দিনে কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় চার-পাঁচটি বড় সমাবেশ করতে চায়। আর ঢাকার বাইরে সব বিভাগীয় শহরে রোডমার্চ কর্মসূচি দিতে পারে। এই ১৫দিনে প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারাদেশে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করবে দলটি। মঙ্গলবার ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জে বড় একটি সমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুন এই কর্মসূচি শুরু হতে পারে।

এবার সব কর্মসূচিই বিএনপি এবং তাদের যুগপৎ আন্দোলনে শরিক ৩৭টি দল একযোগে পালন কববে। তাই সোমবার যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে তা ‘যুগপৎ আন্দোলনের’ কর্মসূচি হিসেবেই ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।

বিএনপির আন্দোলনের শরিক জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের (১১ দল) সমন্বয়কারী এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘১৫ দিনের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে আমাদের সঙ্গে বিএনপির প্রাথমিক আলাপ আলোচনা হয়েছে। এই কর্মসূচি হবে বড় বড় জনসভা ও রোডমার্চ। ঢাকা, ঢাকার আশেপাশে ও বড় বড় শহরে এটা হবে। এই ১৫ দিনের কর্মসূচির মধ্যে যদি শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নেন তাহলে তারপর থেকে শুরু হবে টানা অবরোধ, ঘেরাও, অবস্থান ধর্মঘট। তবে হরতালের চিন্তা আমরা এখনো করছি না।’

পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা অক্টোবরেই আমরা আন্দোলনকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান। বলেন, ‘কারণ নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। তার আগেই আমাদের দাবি আদায় করতে হবে। আর এখন থেকে সব কর্মসূচি হবে যুগপৎ।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মক আন্দোলনের দিকে যাচ্ছি। এই আন্দোলনে নতুন নতুন কর্মসূচি থাকবে। গ্রাম, শহরের সব জায়গায় সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করে চূড়ান্ত আন্দোলন গড়ে তুলব। গণ-আন্দোলন গড়ে তুলব। আমাদের দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। এই দাবি আদায়ের জন্য আমাদের যা করণীয় তা করবো।’

তার কথা, ‘এই আন্দোলনে যুগপৎ আন্দোলনের বাইরেও আরও অনেক দল যোগ দিচ্ছে। সরকারের সঙ্গে দুই-চারটি সুবিধাভোগী দল ছাড়া আর কেউ নেই। সরকারের লজ্জা থাকলে এখনই তারা পদত্যাগ করত। আর আমাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে সব সময়ই কথা হচ্ছে। এবার সব কর্মসূচি যুপৎভাবে পালন করা হবে।’

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি

এদিকে শাসক দল আওয়ামী লীগ সারাদেশে নির্বাচনী জনসংযোগ শুরু করতে যাচ্ছে। সেটা মঙ্গলবার থেকেই শুরু হতে পারে। সোমবার বিএনপি কী কর্মসূচি ঘোষণা করে সেটা দেখে তারা নতুন কর্মসূচিও দেবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘যারা এমপি, যারা প্রার্থী হতে চান আগামী নির্বাচনে তারা সবাই এখন নির্বাচনী জনসংযোগে আছেন। এটা আরও বাড়ানো হচ্ছে। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রচার ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের কর্মসূচি আরও বাড়ানো হচ্ছে।’

পাল্টা কর্মসূচি হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের শান্তি সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি চলছে। ঢাকা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আমাদের প্রতিদিনই কর্মসূচি আছে। নির্বাচন পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। তাই আমাদের পাল্টা কর্মসূচি দিতে হবে কেন? আমাদের নিজেদেরই তো অনেক কর্মসূচি আছে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যদি জনসভা ও রোডমার্চের নামে অতীতের মতো নাশকতা করে। গান পাউডার দিয়ে গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, তাহলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করবে।’

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণের হয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন হারুন উর রশীদ স্বপন। এই প্রতিবেদনের সব ধরনের দায়ভার ডয়চে ভেলের।

ইত্তেফাক/এএএম