ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত লিবিয়া। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা। প্রাণহানির সংখ্যা ইতিমধ্যে ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। এই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটিতে যে শহর সবচেয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে তা ডেরনা। শহরটির বর্তমান পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন বিবিসির সাংবাদিক আন্না ফস্টার।
তিনি বলেছেন, ডেরনা শহরে যেতে এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লাগে। বেনগাজী থেকে সড়ক ধরে যেতে যেতে দেখা যায় দু পাশের জমিগুলো মরিচা ধরা লালচে পানিতে তলিয়ে গেছে। কাছে গেলেই দেখা যায় যানবাহনের গতি ধীর। ভূমি থেকে উপড়ে গেছে তারবাহী বিদ্যুতের পিলারগুলো।
সড়কের এখানে সেখানে তৈরি হওয়া গর্তে পড়ে বেহাল দশা হয়ে পড়ছে যানবাহনের। ভূমধ্যসাগর ঘেঁষা এ শহর যেন পরিণত হয়েছে সাক্ষাৎ মৃত্যুপুরীতে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেরনার কাছেই একটি সেতু বন্যার পানিতে পুরোপুরি ভেসে গেছে। সেখানে এক জায়গায় দাড়িয়ে লোকজন ছবি তুলছে। কাছেই সেনা সদস্যদের দেখা গেলো প্রতিটি গাড়ির চালক ও যাত্রীকে মাস্ক দিচ্ছেন।
মাস্ক পড়েই বিকল্প পথে যানবাহন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন চালকরা। কিছু দূর গেলেই বোঝা যায় এর কারণ কী। শহরের বিভিন্ন জায়গায় মৃত্যুর যে গন্ধ তার বর্ণনা দেওয়া প্রায় অসম্ভব।
নি:শ্বাস নিলে কিছুটা সুয়ারেজের গন্ধ মনে হলেও বাকিটা কেমন তা বর্ণনা করা কষ্টসাধ্য। এ সময় গা গুলিয়ে উঠবে আপনার, বিশেষ করে যদি কেউ বন্দরের দিকে যায় তখন।
উদ্ধারকারী দলগুলোর সদস্যরা বিবিসির সাংবাদিককে জানায়, এখনো সেখানে যত্রতত্র পাওয়া যাচ্ছে মৃতদেহ। আমি যেদিন ডেরনা গিয়েছিলাম, সেদিনও তিনটি মরদেহ পাওয়া গেছে। জোয়ারে ভেসে এসে আটকা পড়েছিলো বন্যায় ভেসে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে।
ভাঙ্গা কাঠের টুকরো, ভেসে যাওয়া ভাঙ্গা গাড়ী, টায়ার সহ নানা কিছু। সব মিলেমিশে একাকার হয়ে ভেসে আছে পানিতে।
বিবিসির আরও বলছে, এখানে শুধু কয়েক হাজার মানুষ পানিতে ভেসে যায়নি। ভেসে গেছে তাদের ঘরবাড়ি, তাদের জীবন। মানবতা যেন ধুয়ে মুছে গেছে শহরের এই অংশ থেকে। যারা বেঁচে আছেন তাদের জীবন পাল্টে গেছে। এখন শুধু দুঃখ আর ক্ষোভ। তথ্যসূত্র: বিবিসি