রোববার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

চট্টগ্রামে সড়কে প্রাণহানির আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি

নগরীতে তিন বছরে ২৬৩ মৃত্যু :সিএমপি ও চসিকের যৌথ প্রতিবেদন

আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:০০

চট্টগ্রাম নগরীতে গত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২৬৩ জন নিহত হয়েছে। গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রকাশিত ‘সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদনে’ এ তথ্য জানানো হয়।

ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস) প্রোগ্রামের আওতায় প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সংস্থা ভাইটাল স্ট্র্যাটেটিজ। সিএমপির সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, প্রকৌশল ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এবং সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কর্মরত অংশীজনদের উপস্থিতিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ২০২০-২০২২ সাল পর্যন্ত মহানগর পুলিশের রেকর্ডকৃত সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার ধরন ও প্রবণতা এবং সেই সঙ্গে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়।    

       

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহ চিত্রের কথা তুলে ধরতে গিয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর যত মানুষ বিভিন্ন অপরাধজনিত কারণে মারা যায়, তার চেয়ে বেশি মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। গত জুলাই মাসে সারা দেশে খুন হয়েছে ২৯৬ জন। একই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার হার অর্ধেকে কমিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।   

প্রকাশিত সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের হার ৩৮ শতাংশ বেড়ে ২০২০ সালে ২ দশমিক ১ থেকে ২ দশমিক ৯ জনে পৌঁছেছে। নিরাপদে হাঁটার মতো সড়ক পরিকাঠামোর অপ্রতুলতার কারণে শহরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃত্যুর ৫৬ শতাংশই পথচারী। এর বাইরে দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৩০ শতাংশ মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলারের চালক-যাত্রীরা। বন্দর নগরীর হওয়ায় চট্টগ্রামের সড়কগুলোতে প্রচুরসংখ্যক ভারী ট্রাক চলাচল করে এবং এসব যানবাহন অধিকাংশ পথচারী ও মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী নগরীতে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বায়েজিদ থানা এলাকায়। এরপরই রয়েছে বাকলিয়া থানা এলাকা। দুর্ঘটনায় সব বয়সী পথচারীর মৃত্যুর হার কাছাকাছি হলেও শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ঝুঁকি বেশি। নগরীর সড়ক নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য প্রতিবেদনে শহরের ১০টি করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং সড়ক চিহ্নিত করা হয়েছে। এই অনুযায়ী সবচেয়ে বিপজ্জনক সড়ক হচ্ছে বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক যেখানে গত তিন বছরে প্রতি কিলোমিটারে প্রায় পাঁচটি করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। 

অন্যদিকে, নগরীর সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান হচ্ছে টাইগার পাস মোড় এবং আউটার রিং রোডের খেজুরতলা। গত তিন বছরে সেখানে ২৫০ মিটারের মধ্যে পাঁচ জন মারা গেছে। প্রতিবেদনে নগরীর সড়কগুলো নিরাপদ করতে বেপরোয়া গাড়ি চালনা বন্ধ করা, পথচারীদের নিরাপদে হাঁটার জন্য ফুটপাত প্রশস্ত করা, উঁচু ক্রসওয়াক নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন ফুটপাত নিশ্চিত করা, মোটরসাইকেলের পরিবর্তে বাইসাইকেল ব্যবহার উত্সাহিত করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া বেপরোয়া গাড়িচালনা নিয়ন্ত্রণ করতে শহরে বাস রুট রেশনালাইজেশনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিআইজিআরএসের ইনিশিয়েটিভ কোঅর্ডিনেটর মো. আব্দুল ওয়াদুদ, সার্ভেল্যান্স কোঅর্ডিনেটর কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ, ভাইটাল স্ট্র্যাটেটিজের সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর মিরিক পালা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।

ইত্তেফাক/এমএএম