বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

লাইভে ছাত্রলীগ নেত্রীর বক্তব্য ‘সীমা লঙ্ঘনের শামিল’: রাবি উপ-উপাচার্য

আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:১১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা শশীর ফেসবুক লাইভের বক্তব্যে ক্যাম্পাসজুড়ে তোলপাড় চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু এই ফেসবুক লাইভের বক্তব্যকে অর্বাচীন বলে মন্তব্য করেছেন। তবে এই ঘটনাকে ‘সীমা লঙ্ঘনের শামিল’ বলে মন্তব্য করেছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান উল ইসলাম টিপু। 

উল্লেখ্য, গত শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা শশী ফেসবুক লাইভে এসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–উপদেষ্টা, প্রক্টোরিয়াল বডি, প্রক্টর, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেওয়াটা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন। দ্রুত তার ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সৃষ্টি হয় আলোচনা-সমালোচনার। একপর্যায়ে নানা মহলের চাপের মুখে তিনি ফেসবুক থেকে তার লাইভ ভিডিওটি সরিয়ে নেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ধরনের অর্বাচীন বক্তব্য সুখকর নয়। এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু বলারও নেই। তবে আমাদের সবার কথা বলার আগে লক্ষ্য রাখা উচিত, আমি কী বলছি, আমার অবস্থান কী? তাছাড়া আমি দলীয় পরিচয়ে হাইলাইটস হতে চাই না।’ ছাত্রলীগের ওই নেত্রী এমন মন্তব্য করতে পারেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি নির্ভর করছে তার শিক্ষাগত জ্ঞান, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণা ও শিক্ষকদের প্রতি সম্মানবোধ কতটুকু, তার ওপর। আমাদের ৯৫ শতাংশই শিক্ষার্থীই ভালো। তাঁদের সঙ্গে আমি মিশেছি ও খেলাধুলা করেছি। তবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি, কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর (৫ শতাংশ) ডাজেন্ট মেক সেন্স।’

তবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান উল ইসলাম টিপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই ছাত্রলীগ নেত্রী আমাদের নিয়োগ নিয়ে কথা বলেছে। আমরা যখন দল করেছি, যোগ্যতা অর্জন করেছি, তখন তার জন্মই হয়নি। আমাদের সম্পর্কে কথা বলতে হলে আমাদের বিষয়ে জানতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিয়োগ দিয়ে ভুল করেছে, এত বড় স্পর্ধা তার দেখানো উচিত হয়নি। এটি তার সীমা লঙ্ঘন করা বক্তব্য।’ 

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে তার ভাবা উচিত, তার এই বিষয়ে বলার এখতিয়ার রয়েছে কি না? ওই শিক্ষার্থীর এই বিষয়ে বলার জায়গা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় চলবে তার নিজস্ব বিধিবিধান অনুযায়ী। কেউ যদি বিধি লঙ্ঘন করেন, তিনি যে–ই হোন না কেন, তিনি বিধি লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন।’

ক্যাম্পাস সূত্রগুলো বলছে, গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রহমতুন্নেছা হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না আক্তার তন্বীর ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও অবৈধভাবে হলে থাকায় তাকে কক্ষ ছাড়ার নির্দেশ দেয় হল প্রশাসন। কিন্তু তিনি হল ছাড়েননি। পরদিন উল্টো হলের গেটে তালা লাগিয়ে দেন তামান্নার নেতৃত্বে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে মানবিক কারণ দেখিয়ে ওই ছাত্রলীগ সভাপতিকে হলে থাকতে দিয়েছে হল প্রশাসন।

সূত্র মতে, এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ঐশী নামের এক ছাত্রলীগ নেত্রীর রুম সিলগালা করে দেয় হল প্রশাসন। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকেরা সংবাদ প্রকাশ করায় মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা শশী ফেসবুক লাইভে সাংবাদিক ও প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এদিকে সাংবাদিকদের জড়িয়ে মন্তব্যর বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) সভাপতি তৌসিফ কাইয়ুম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বর্তমানে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য চলছে। মূলত তাদের নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে সাংবাদিকদের ওপর দায় চাপাচ্ছেন তারা।’

ইত্তেফাক/এআই