রোববার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

১৪ হাজার বেকার যুবক-যুবতীকে ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়েছেন শুভ

আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:৩৫

মাদারীপুরের মেহেদি হাসান শুভ মাত্র ৫ বছরে ১৪ হাজার বেকার যুবক-যুবতীকে ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়েছেন। পেয়েছেন আইসিটি খাতে দেশি-বিদেশি অর্ধশত পদক। নিজেও প্রতি মাসে আয় করছেন প্রায় দুই লাখ টাকা। 

অন্যদেরও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ সুগম করে দিয়েছেন। এতে বাড়ছে দেশের রেমিট্যান্সও। তার অনুপ্রেরণায় ঘরে বসেই আয় করছেন যুবক-যুবতীরা। 

সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের পশ্চিম মাদ্রা গ্রামের আব্দুল কাদের সরদারের ছেলে শুভ ২০১৫ এইচএসসি পাস করার পর নিজে শেখেন ফ্রিল্যান্সিং। চর্চা করে ২০১৯ সালে অন্যদের শেখানোর জন্য পরিপূর্ণভাবে এই ফ্রিল্যান্সিং কার্যক্রম শুরু করেন।
 
জানা গেছে, ৫ বছরে ১৪ হাজার যুবক-যুবতীকে শিখিয়েছেন কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে হয়। শুভ নিজেও মাসে আয় করছেন গড়ে দুই লাখ টাকা। পেয়েছেন জাতীয় পর্যায়ে রাইজিং ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড, মাদার তেরেসা পদক, মহাত্মা গান্ধী ইয়ুর্থ অ্যাওয়ার্ডসহ দেশি-বিদেশি আইসিটি খাতে অর্ধশত পদক। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মেহেদি হাসান শুভ বাসায় বসেই কম্পিউটারের মাধ্যমে মাত্র ৪ ঘণ্টা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। এতে যোগ দিচ্ছেন বেকার যুবক-যুবতীরা। কীভাবে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায় সেই নির্দেশনা পাচ্ছেন তারা। ৩ থেকে ৬ মাসের কোর্সের জন্য জনপ্রতি দিতে হয় ৮-১০ হাজার টাকা। রয়েছে দরিদ্র ও মেধাবীদের জন্য ফ্রিতে শেখার সুযোগ। চাকরির পেছনে না ছুটে চাকরির ক্ষেত্রে তৈরি করতে পারছে অনেকেই। 

মেহেদি হাসান শুভ’র ছোট বোন সাথী আক্তার বলেন, আমরা দুই ভাই এক বোন। আমার ভাইয়া ফ্রিল্যান্সিং করে, নিজে অন্যদের শিখাচ্ছেন। ভাইয়া এখন দেশ সেরা ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে একজন। এটা ভাবতেই গর্ব বোধ করি।
 
শুভ’র মা খালেদা বেগম বলেন, পুরো পরিবারের দায়িত্ব এখন শুভ নিয়েছে। ওর বাবা আগে ঢাকায় একটি চাকরি করতো। সামান্য অর্থ দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হতো। ছেলের এমন আয়-উন্নতি দেখে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমরা এখন অনেক সুখে আছি।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চুরুমদি এলাকার তুষার সরদার নামে এক যুবক বলেন, স্নাতক পাস করার পর চিন্তা করেছিলাম কি করব, মাথায় কাজ করছিল না। পরে অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পারি, ফ্রিল্যান্সিং করলে ঘরে বসে আয় করা যায়। তাই আর দেরি না করে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স সম্পন্ন করে এখন মাসে এক লাখ টাকার বেশি আয় করছি। এ জন্য কার কাছে ধরনা ধরতে হয় না। কাজ শেষে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ডলার চলে আসে, পরে বাংলাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশীয় টাকা উঠাতে পারছি। 

মাদারীপুরের কালকিনির উত্তর রমজানপুর গ্রামের আসাদুজ্জামান আসাদ পাইক বলেন, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন মোটামুটি আয় করছি। এটার পেছনে লেগে থাকলে ভবিষ্যতে আর আয় বাড়বে। 

বরগুনার আমতলী নতুন বাজার এলাকার আরিফ হোসেন খলিফা বলেন, অনলাইনে ৬ মাসের একটি পরিপূর্ণ কোর্স করে এখন বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) আয় করছি। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবই ভালোই আছি। 

ফ্রিল্যান্সার মেহেদি হাসান শুভ বলেন, শহর কিংবা গ্রাম, যেকোন জায়গায় বসে একটি ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করা সম্ভব। এতে একদিকে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, অন্যদিকে দেশের রেমিট্যান্স বাড়ানো সম্ভব। নিজে প্রতিষ্ঠিত হবার পাশাপাশি বেকারদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। কারো অর্থনৈতিক সমস্যা হলে, ফ্রিতেও রয়েছে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।

ইত্তেফাক/পিও