বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ইসলামের সুমহান শিক্ষা

আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৩২

ইসলাম একটি আরবি পরিভাষা। এর আভিধানিক অর্থ—আনুগত্য করা, আত্মসমর্পণ করা, অনুগত হওয়া, কোনো কিছু মাথা পেতে নেওয়া। এটি সালম, সিলম বা সিলমুন মূল ধাতু থেকে এসেছে। যার এক অর্থ—শান্তি, সন্ধি, সমর্পণ ও নিরাপত্তা। যেহেতু আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ হয়, তাই একে ইসলাম বলা হয়। অন্য কথায়, ইসলামের অর্থ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে তার নির্দেশ মেনে নেওয়ার মাধ্যমে জীবনের সকল পর্যায়ে শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন করা। ‘ইসলাম’ শব্দটিতে আল্লাহ-তাআলার ধর্মের মূলতত্ত্ব নিহিত রয়েছে। আরবি ভাষায় ইসলাম বলতে বোঝায় আনুগত্য, বাধ্যতা ও আত্মসমর্পণ। ইসলাম গ্রহণ করার মাধ্যমেই আল্লাহর কাছে সমর্পণ করতে হয়। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত যা কিছু আছে, সব কিছু আল্লাহ-তাআলার কাছে অর্পণ করার নামই হলো ইসলাম।

নাম থেকেই বোঝা যায় যে, ইসলাম কোনো ব্যক্তিবিশেষের আবিষ্কার নয়, কোনো জাতির নামানুসারেও এ মতাদর্শের নাম হয়নি। ইসলাম নামটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রদত্ত। ইসলামের সঙ্গে রয়েছে মানুষের জীবনের সুগভীর সম্পর্ক। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার নাম। এতে রয়েছে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি সমস্যার মৌলিক সমাধান আর মৃত্যুর পর আখেরাতের অনন্ত জীবনে নিশ্চিত সুখ-শান্তি লাভের উপায়। আল্লাহ-তাআলা কুরআনুল কারিমে একাধিক স্থানে এ বক্তব্য তুলে ধরেছেন—‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবনব্যবস্থা হলো ইসলাম।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯) তিনি আরো বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে (জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে) পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সুরা মায়েদা :আয়াত ৩) কুরআনুল কারিমের আয়াতে কারিমা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ-তাআলা ইসলামকে মানবতার জন্য নেয়ামত হিসেবে পাঠিয়েছেন।

এখন হয়তো কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, ইসলাম গ্রহণ করলে আমাদের কী লাভ? এক কথায় বলা যায়—ইসলাম গ্রহণ করলে ও মেনে চললে অনেক লাভ রয়েছে। প্রথমত ইসলাম গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ-তাআলার সান্নিধ্য লাভ করতে পারি। হাদিসে পাকে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা বলেছেন—‘বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করে আর তার ইসলাম খাঁটি হয়, আল্লাহ তা দ্বারা তার প্রায়শ্চিত্ত করে দেন সে আগে যা অপরাধ করেছে। অতঃপর তার সত্ কাজ হয় অসত্ কাজের বিনিময়; সত্ কাজ তার ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ, বরং বহু গুণ পর্যন্ত আর অসত্ কাজ তার এক গুণ মাত্র, তবে আল্লাহ যাকে ছেড়ে দেন তার এক গুণ শাস্তিও হবে না।’ (বুখারি)

প্রকৃত পক্ষে কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করার সৌভাগ্য লাভ করে, তবে সে মূলত নিজেকেই অনুগ্রহ করে। যেভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন—‘তারা ইসলম গ্রহণের মাধ্যমে (মুসলমান হয়ে) আপনাকে ধন্য করেছে মনে করে। (হে রাসুল! আপনি) বলুন, তোমরা মুসলমান হয়ে আমাকে ধন্য করেছ মনে করো না। বরং আল্লাহ ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদের ধন্য করেছেন, যদি তোমরা সত্যনিষ্ঠ হয়ে থাকো।’ (সুরা হুজাত:আয়াত ১৭)

সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে হজরত মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সব সম্মানিত নবি-রাসুলের মাধ্যমে আল্লাহ-তাআলা মানুষকে ধর্ম তথা সত্য জীবনব্যবস্থার দিকে আহ্বান করেছেন। এ জীবনব্যবস্থা ইসলাম সত্য ও ন্যায়ের শাশ্বত সৌন্দর্যের আলোকে পথ দেখিয়ে চলেছে সমগ্র মানবজাতিকে। অত্যাধুনিক সভ্যতা ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধির এ যুগে মানুষ আজ কঠিনতম বাস্তবতার শিকার। সবাই চায় সচ্ছলতা, চায় শান্তি। মহান আল্লাহ-তাআলা মনোনীত পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা ‘ইসলাম’, সেই অনন্ত শান্তির বাণীই প্রচার করছে। দিনের পর দিন ইসলাম গ্রহণকারীর সংখ্যা যে বৃদ্ধি পাচ্ছে এর প্রধান কারণ হচ্ছে—ইসলামের তুলনাহীন আদর্শ ও সুমহান শিক্ষা। ইসলামের উন্নতি সম্পর্কে অনেকেই অনেক মন্তব্যও করেছেন, যেমন—বিখ্যাত দার্শনিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছিলেন, “আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি যে, মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রচারিত ধর্ম ‘ইসলাম’ আগামী দিনের ইউরোপবাসীদের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হবে। ইতিমধ্যে আজকের ইউরোপবাসী ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করেছে।’ (জেনুইন ইসলাম)

বর্তমান বিশ্ব, বিশেষত খ্রিষ্টবাদের প্রাণকেন্দ্র ইউরোপ ও আমেরিকার দিকে তাকালেই জর্জ বার্নার্ড শর  সেই ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবতার প্রমাণ মেলে। সত্য আর শান্তির সন্ধানে মানুষ পাগলপারা হয়ে ইসলামের সঠিক বিশ্বাসের দিকেই ছুটে আসছে। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে।

লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা, পরিচালক, বিএসসিএল ও ইসলামি গবেষক

ইত্তেফাক/এসকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন