শরৎকাল পরার সাথে সাথেই কাশফুলের শুভ্রতা এবং শিউলি ফুলেৱ সুবাশ যেন বারবার মনে করিয়ে দেয়, মা আসছেন বছর ঘুরে। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। দেশের মন্ডপগুলোতে চলছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি। বাঙালির সঙ্গে দুর্গোৎসবের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। প্রৌঢ় থেকে নবীন, সকল বয়সের মানুষের প্রাণে এক অবিচল আনন্দে উদ্দেলিত থাকে দুর্গোৎসবকে ঘিরে। এই উৎসব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনুভূতি ও উচ্ছ্বাসের যেন কমতি নেই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অনন্য প্রতীক রাউত জানান, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা। শরতের শুভ্রতায়, শঙ্খের তালে দেবীর আগমন মানেই ভিন্নকিছুর সূচনা। সদ্য ভূমিষ্ঠ ফুলের মালা, মনের ভক্তি, হৃদয়ের শুদ্ধতা নিয়ে ছোট থেকেই দুর্গাপূজার আমেজ ছিল উপলব্ধি করার মত। বিশেষ করে পূজোর নাচানাচি খাওয়া-দাওয়া কিংবা গ্রামের বাড়ির প্রাকৃতিক আবহের অনুধাবন। যুগ পাল্টেছে, বয়স একটু হলেও বেড়েছে তবে অতীতের আমেজে পড়েছে ভাটা। বাড়ি যাওয়া হলেও অবস্থা আগের মত নেই বরং স্মৃতির পাতায় সুখের সেই দিনগুলো বন্দি হয়েই রয়েছে। ক্যাম্পাস টাই যেন এখন দ্বিতীয় পরিবার। মুক্ত এই প্রগতিশীল পরিবেশের বাইরে সবটাই তাই অস্বাভাবিক মনে হয়৷ যেহেতু দূর্গাপূজা সার্বজনীন উৎসব তাই ক্যাম্পাস গুলোর এ ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া জরুরি বলে আমি মনে করি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা শিক্ষার্থী জয়া নাইডু জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে পরিবারের সাথে পূজা উদযাপন করতাম, সবাই একসাথে ঠাকুর দেখতে যেতাম এটার আলাদা একটা মজা ছিল। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আগের মতো আনন্দ পাওয়া হয়ে ওঠে না। এখন ভার্সিটি ছুটি দিলে বাড়ি যাওয়া হয় আবার পূজার পরেই অধিকাংশ সময় দেখা যায়, সেমিস্টার ফাইনাল থাকে তো এটার একটা মানসিক চাপ থাকে। পূজার আগে টিউশন করিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী বাবা, মা-র জন্য কিছু কিনতে পারি এটাতে অন্যরকম একটা আনন্দ কাজ করে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী পুজা মোদক জানান, ‘বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ’’ তার মধ্যে অন্যতম হল ‘দুর্গোৎসব’, আর এই দুর্গোৎসব এই বাঙালিদের শ্রেষ্ট উৎসব নামে পরিচিত। কাশ বনের দোলায় দেবীপক্ষের সূচনা বাঙালির মনকে আলোড়িত করে। বাঙালির দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটে মহালয়ার শুভ বন্দনাতে। শরৎ এর মেঘের ভেলা আর শিউলি ফুলের গন্ধ দশভুজার আগমনকে উন্মুক্ত চিত্তে স্বাগত জানায়। চারিদিকে উৎসবের আমেজে ম-ম করে। উৎসবের এই আমেজে নিয়মিত পুলকিত হই আমরা। বদলেছে পরিস্থিতি সত্যি তবে শারদীয় আগমনী যে আভা আজো তা মনেই ঠিকই উৎসবের নতুন মাত্রা যোগ করে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সুস্মিতা ভৌমিক জানান, দূর্গাপূজা বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। উল্লেখ্য, শাস্ত্রমতে বসন্তকাল দুর্গাপূজার শুদ্ধ সময় হলেও ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্র রাবণকে পরাজিত করে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে অকালবোধন করেন। সেই থেকেই শরৎ কালে দুর্গাপূজার প্রচলন এবং একে শারদীয় দুর্গাপূজা বলা হয়। শুভশক্তির প্রতীক দেবী দুর্গা একদিকে যেমন সকল অশুভ, অন্যায়, অত্যাচারকে বিনাশ করে অসুরনাশিনী অন্যদিকে তেমনি মাতৃরূপে কুসুমকোমল। তিনি ভক্তের দূর্গতি বিনাশ করে সমৃদ্ধিতে ভরিয়ে দেন। অর্থাৎ তিনি শক্তি এবং শান্তি উভয়রূপেই বিরাজমান।
ওই শিক্ষার্থী আরো জানান, ছোট বেলার সেই আমেজ এখন আর নেই। একসাথে দলবেঁধে পূজা দেখা, অঞ্জলি দেওয়া কিংবা ঘোরাঘুরি ক্রমেই বয়সের সাথে সাথে পাল্টে যাচ্ছে। পরিস্থিতি বদলেছে সেটাও বাস্তবতা। যদিও বিগত বছরে দেশের বিভিন্ন যায়গায় পূজা মন্ডপ এবং প্রতিমা ভাংচুর এর ঘটনায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মনে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপন নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে যা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে কখনোই কাম্য নয়।