রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে অবস্থান নিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিবের কক্ষে ভাংচুর চালায়।
রবিবার (২২ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নেতা–কর্মীদের নিয়ে মাদার বখশ হলে যান বিদায়ী কমিটির কাজী আমিনুল ইসলাম, নতুন কমিটির সহসভাপতি শাহিনুল ইসলাম সরকার ও তাওহিদুল ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সাকিবুল হাসান। তারা ওই হলের ২১৫ নম্বর কক্ষ ও ওই কক্ষের দুই পাশের ২টি কক্ষে ভাঙচুর চালান। ২১৫ নম্বর কক্ষে থাকেন বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিব। এ সময় তারা কক্ষের দরজা, জানালা ও গাছের টব ভেঙে প্রায় ১০ মিনিট পর হল ত্যাগ করেন।
এর আগে, সকাল ১০ টা থেকে দলীয় ট্রেন্ট/কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে অবস্থান ও মোটরবাইকে ক্যাম্পাস শোডাউন দেন পদ বঞ্চিত নেতা ও তাদের কর্মীরা।
দীর্ঘ ৭ বছর পর রাবি ছাত্রলীগের এই কমিটিতে এক বছরের জন্য মোস্তাফিজুর রহমানকে সভাপতি ও আসাদুল্লা হিল গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। মোস্তাফিজুর আগের কমিটির গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন এবং আসাদুল্লা হিল গালিব ছিলেন বিদায়ী কমিটির প্রশিক্ষণ সম্পাদক।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, নতুন কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে আজ বেলা ১০ টার দিকে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতারা তাদের অনুসারীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। এরপর দলীয় টেন্টে সহসভাপতি পদ পাওয়া শাহিনুল ইসলাম নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। ক্যাম্পাসে নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও সেখান থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন বলেন, বর্তমান কমিটি সম্পূর্ণ বিতর্কিত। অছাত্র, ইন্টারপাস ও বিতর্কিতদের নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। সভাপতি বাবু ৬ মাস আগে রাজনীতিতে এসেছে। নেতা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক গালিব বিবাহিত, ইন্টারপাস ও বিতর্কিত। রাজাকারের নাতিও এই কমিটিতে আছে।
আমরা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। তাদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়া হবে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরা আসতে পারবে না।
গত কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন বলেন, ৩৪ দিন যাচাই-বাছাই করে যে কমিটি দিয়েছে তা মেনে নেওয়ার মত না। সকল পোস্ট বিতর্কিতদের দিয়ে করা হয়েছে। সম্মেলন হওয়ার ২ দিন আগেও বাবু প্রার্থী ছিল না। সে সেলুনে চুল কাটার ব্যবসা করত। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক গালিব ইন্টার পাস। ৩, ৪ বছর পড়াশুনা করে পাস করতে পারেনি। বিবাহিত। তার পরিবারের ৮ জন বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। গত কমিটিতে যে সহ-সভাপতি এখন ৭ বছর পর সে আবার সহ-সভাপতি। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই কমিটি হাস্যকর। এটা আমাদের সাথে রসিকতা করা হয়েছে। তারা সংগঠন শেষ করে দিয়েছে। আমরা এই সম্পূর্ন কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।
ছাত্রলীগের সূত্রে জানা যায়, নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রথম বর্ষে উত্তীর্ণ হলেও দ্বিতীয় বর্ষ আর টপকাতে পারেননি। পরে ড্রপআউট হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন তিনি। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভুয়া সনদে’ তিনি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকোর্সে ভর্তি হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। ছাত্রত্ব না থাকলেও তিনি অবৈধভাবে হলে বসবাস করেন।