বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

দুর্গোৎসবে মেতেছে পুরান ঢাকা

আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:৪৫

শারদীয় দুর্গোৎসবের মহা অষ্টমী আজ। পূজোর আনন্দে বর্ণিল সাজে আগেই সেজেছে মণ্ডপগুলো। মণ্ডপ থেকে ভেসে আসা ধুপের গন্ধ জানান দিচ্ছে শারদীয় দুর্গা উৎসবের সার্বজনীন আনন্দ বার্তা। মণ্ডপে-মণ্ডপে ভক্ত দর্শনার্থীদের ঢল। দেবীর চরণে প্রাণের অর্ঘ নিবেদনে আবাল-বৃদ্ধ বণিতা ঘুরছেন মণ্ডপে মণ্ডপে। ঢাক-ঢোল আর কাঁসার ঘণ্টার মূর্ছনা ও মাঙ্গলিক মন্ত্রোচ্চারণে সর্বত্র উৎসবের আমেজ।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর পুরান ঢাকায় অষ্টমীর দিন ভোর থেকেই সনাতন ধর্মালম্বীরা জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন মণ্ডপে। উপচে পড়া ভক্ত দর্শনার্থীদের ঢল মহা আনন্দ উৎসবে পরিণত হয়েছে প্রতিটি পূজা মণ্ডপে। আনন্দে মাতোয়ারা ছোট-বড় সবাই। অনেকেই প্রতিমার সঙ্গে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন মন্দিরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরে খুশি ভক্ত-দর্শনার্থীরা।

প্রবাহমান কালের গতিতে ও ঋতুচক্রের আর্বতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শরৎ এসেছে আগমনী শান্তির বার্তা নিয়ে। আসুরিক শক্তি যখন মানবিক শক্তিকে পদদলিত করে, তখনই সর্ব শক্তিমান বিশ্ব স্রষ্টা আর্বিভূত হন ঈশ্বর রূপিণী মা দুর্গা রূপে। সেই ধরা ধামে সন্তানেরা মাকে কাছে পেয়ে হয়ে যায় আত্মহারা। সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমোঃ নমোঃ।’ মাতৃ পূজার এই আয়োজনকে ঘিরে সকল পূজারীরা দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় পূজায় ব্রতি হয়েছেন।

রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি পূজা উদযাপিত হয় পুরান ঢাকায়। এবার শাঁখারিবাজার, তাঁতিবাজার, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, শ্যামবাজার, প্যারীদাস রোড, কলতাবাজার, মুরগিটোলা, মদনমোহন দাস লেন, বাংলাবাজার গোয়ালনগর, জমিদারবাড়ী, গেণ্ডারিয়া, ডালপট্টি এলাকার অলিগলিতে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। ভক্ত ও দর্শনার্থীদের আবেগ ও উচ্ছ্বাসের কথা জানান ইত্তেফাক অনলাইনকে।

শাঁখারিবাজারের পূজামণ্ডপে আসা দর্শনার্থী হিরণ বসু বলেন, ‘পরিবার নিয়ে সকালে এসেছে মায়ের অঞ্জলি দিতে। বাচ্চারা খুবই মজা করেছে। প্রতিবছরই এখানে আসা হয়। আশেপাশের সবগুলো পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখলাম। বলেন, পূজার আনন্দটা মূলত ছোটবেলায় বেশি থাকতো। এখন পরিবার, সন্তান নিয়ে ব্যস্ততা বেশি। ছোটবেলার পূজার স্মৃতি আজও মনে পড়ে। কিছু মুহূর্ত আছে যা কালক্রমে কানে বেজে ওঠে। নতুন জামাকাপড়ের আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতাম। নতুন জামাকাপড় যথাসাধ্য পরিপাটি করে বন্ধু-বান্ধব মিলে পূজামণ্ডপগুলোতে ঘুরে বেড়াতাম। পূজায় আমাদের বাড়িতে দুধের সন্দেশ, নারিকেলের নাড়ু বানানো হতো। নিজেদের ঘরেও খেতাম আবার পূজো বাড়িতে গেলেও খাওয়া হতো। আরতির সময় ঢাক-কাঁসরের তালে তালে নাচ হতো। সময় আসলেই অনেক দ্রুত বদলে যাচ্ছে, মাঝে মধ্যে মনে হয় এই তো সেই দিন পূজাতে আরতি করেছি। সেই সময় পূজার আনন্দটাই অন্যরকম ছিল। মায়ের কাছে ভ্রাতৃত্ববোধ যাচনা করেছি। আমরা কোনো বিদ্বেষ ও হানাহানি চাই না। ধর্মীয় সম্প্রীতির অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই।’

পূজো দেখতে বাবা মায়ের সঙ্গে বেড়িয়েছে সপ্তম শ্রেণির স্বর্ণা পাল। সে জানাল, ‘এদিন বাবার ছুটি। বাবা চাকরির জন্য সবসময় ছুটি পায় না। তাই এদিন যতগুলি পূজো সম্ভব দেখে ফেলব। আজ সারা রাত ঘুরব। মায়ের অঞ্জলি দিয়ে প্রসাদ খেয়েছি। খুব মজা লাগছে। এখন আশপাশের পূজা মণ্ডপ গুলো ঘুরবো।’

প্যারীদাস রোড পূজামণ্ডপে বাসন্তী ঘোষ জানান, ‘তিনি দুর্গা মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছেন, মা যেন স্বামী-সংসারসহ সবাইকে প্রতিটি মুহূর্তে সুখে-শান্তিতে রাখেন। দেশের প্রতিটি মানুষ যেন সুখ-শান্তিতে থাকে আর মা যেনো সব সমস্যা দূর করে দেয় তার জন্য প্রার্থনা করেন।’

পুজোকে উপভোগ করতে চান তাঁতীবাজারের তরুণী সিমি বণিক। তিনি বলেন, ‘সপ্তমী থেকেই ঘুরছি। দশমী পর্যন্ত ঘুরব। বিয়ের পর এবারই প্রথম পুজোয় ঘোরা। তাই উদ্দীপনা একটু বেশিই। এবারের আয়োজন সব মিলিয়ে খুব ভালো হয়েছে। অন্যবার দুর্গা পূজা বাবার বাড়ির সবার সঙ্গে কাটাতাম, এইবার শ্বশুরবাড়িতে। মায়ের কাছে প্রার্থনা করি এ বছর যেন সবার ভালো কাটে।’

শাঁখারিবাজারের সংঘমিত্র পূজা কমিটির পুরোহিত বলেন, ‘ষষ্ঠীর দিনে বোধনের মধ্য দিয়ে মা দুর্গা মর্ত্যলোকে আগমন করেন। সেদিন থেকে মা পাঁচ দিন, মানে বিজয়া দশমী পর্যন্ত অবস্থান করেন। এই সময়ে তিনি ধরাধামে সব অশুভ শক্তি ধ্বংস করেন। এ বছর তারা মায়ের কাছে পৃথিবীর শান্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন। সব ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে যাতে একসঙ্গে সব বিভেদ ভুলে বসবাস করতে পারে, সে প্রার্থনা করা হয়।’

নিরাপত্তার বিষয়ে উপ-পরিদর্শক সুত্রাপুর থানা ডিএমপি (এসআই) নাহিদুল ইসলাম বলেন, সার্বজনীন দুর্গাপূজার নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রদানের লক্ষে (ডিএমপি কমিশনার) নির্দেশনা মোতাবেক এবং (ওসি সুত্রাপুর) এর সার্বিক তত্বাবধানে সূত্রাপুর থানা পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সূত্রাপুর থানা এলাকায় প্রত্যেক থানা এলাকায় মণ্ডপগুলোতে সি সি ক্যামেরা/মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মালম্বীদের এই মহোৎসবের মূল আয়োজন শুরু হয়। নানা আচার-অনুষ্ঠান ও পূজার পর মঙ্গলবার দশমী এবং দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এই আয়োজনের শেষ হবে।

ইত্তেফাক/এআই

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন