প্রায় সাত বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৩৯ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিক্ষোভ, মিছিল, শোডাউন, ভাংচুর ও হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতারা।
রোববার (২২ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে দলীয় ট্রেন্টে অবস্থান নেন পদবঞ্চিত নেতারা। এ সময় তারা সভাপতি ও সম্পাদককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ না করার হুশিয়ারি দেন।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারীদের রুম থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে একজনকে মারধর ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন পদবঞ্চিত নেতা ও তাদের কর্মীরা।
পদবঞ্চিত নেতারা বলেন, এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা না করা পর্যন্ত বর্তমান কমিটিকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে দেওয়া হবে না।
তাদের অভিযোগ, এই কমিটি অছাত্র, বিতর্কিত, বিবাহিত, নিষ্ক্রিয়দের দিয়ে গঠিত এবং এ কমিটির মাধ্যমে স্বচ্ছ, সক্রিয় ও ত্যাগীদের সাথে রসিকতা করা হয়েছে।
বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে নেতা–কর্মীদের নিয়ে মাদার বখশ হলে যান বিদায়ী কমিটির কাজী আমিনুল ইসলাম, নতুন কমিটির সহসভাপতি শাহিনুল ইসলাম সরকার ও তাওহিদুল ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সাকিবুল হাসান। তারা ওই হলের ২১৫ নম্বর কক্ষ ও ওই কক্ষের দুই পাশের ২টি কক্ষে ভাঙচুর চালান। ২১৫ নম্বর কক্ষে থাকেন বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিব। এ সময় তারা কক্ষের দরজা, জানালা ও গাছের টব ভেঙে হল ত্যাগ করেন।
আশানুরূপ পদ না পওয়া বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন বলেন, বর্তমান কমিটি সম্পূর্ণ বিতর্কিত। অছাত্র, ইন্টারপাস ও বিতর্কিতদের নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। সভাপতি বাবু ৬ মাস আগে রাজনীতিতে এসেছে। নেতা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক গালিব বিবাহিত, ইন্টারপাস ও বিতর্কিত। রাজাকারের নাতিও এই কমিটিতে আছে। আমরা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। তাদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরা আসতে পারবে না।
গত কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন বলেন, ৩৪ দিন যাচাই-বাছাই করে যে কমিটি দিয়েছে তা মেনে নেওয়ার মত না। সকল পোস্ট বিতর্কিতদের দিয়ে করা হয়েছে। সম্মেলন হওয়ার ২ দিন আগেও বাবু প্রার্থী ছিল না। সে সেলুনে চুল কাটার ব্যবসা করত। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক গালিব ইন্টার পাস। ৩, ৪ বছর পড়াশুনা করে পাস করতে পারেনি। বিবাহিত। তার পরিবারের ৮ জন বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। গত কমিটিতে যে সহ-সভাপতি এখন ৭ বছর পর সে আবার সহ-সভাপতি। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই কমিটি হাস্যকর। এটা আমাদের সাথে রসিকতা করা হয়েছে। তারা সংগঠন শেষ করে দিয়েছে। আমরা এই সম্পূর্ন কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।
বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি তাওহীদুল ইসলাম দুর্জয় বলেন, গত নভেম্বরে সম্মেলন হলে বাবু সেখানে কোন প্রার্থীই ছিল না। সে সময়ে সেলুনের ব্যবসা করতো। কিছুদিন আগে সে রাজনীতিতে এসেছে। সাধারণ সম্পাদক গালিব অছাত্র, বিতর্কিত। এই কমিটিতে পিএইচডি এমফিল শিক্ষার্থীরা আছেন। তাদের নেতা কিভাবে ইন্টারপাস হয়?
রাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এ বিষয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন চিন্তা-ভাবনা করেই এ কমিটি দিয়েছেন। যারা এ কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে তাদের ব্যক্তি স্বার্থ রয়েছে। নতুন এই কমিটিকে বিশ্ববিদ্যায়ের সব স্তরের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানিয়েছেন। আমাদের সংগঠনের কতিপয় ছাত্রনেতা ও কর্মী কমিটিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। এতে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে আমরা প্রতিহত করব।