কক্সবাজারের রামুর ঐতিহ্যবাহী রাবারবাগানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মনোরম পরিবেশ দর্শনার্থীদের মনে আনন্দ দেয়। প্রতিদিন ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে আসেন এখানে। পাহাড়ি উঁচুনিচু বাগানে প্রবেশ করতে সবুজের সমারোহ নজর কাড়ে পর্যটকদের।
বর্তমানে রাবারবাগানটি দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কক্সবাজার শহর হতে ১৭ কিলোমিটার দূরে এবং রামু চৌমুহনী থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দুই পাশে চোখে পড়বে নয়নাভিরাম রাবারবাগান। এর পূর্ব পাশে রয়েছে রাবার কষ প্রক্রিয়াকরণ কারখানা। বিশাল বাগানের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্পটে দৃষ্টিনন্দন একটি বিশ্রামাগার রয়েছে। যেটি রেস্টহাউজ এলাকা নামে পরিচিত। বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিলে এখানে বিশ্রাম, বনভোজনসহ নানা আয়োজন করতে পারেন পর্যটকরা।
কক্সবাজারের রামুর জোয়ারিয়ানালা এলাকায় দেশে কাঁচা রাবারে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের উদ্যোগে ১৯৬০ সালে ৩০ একর জমিতে মালয়েশিয়া থেকে বীজ এনে সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয় প্রথম মাতৃ রাবারবাগান। বর্তমানে এর আয়তন ২ হাজার ৬৮২ একর। এ বাগানে রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৬১৬টি গাছ। এর মধ্য উত্পাদনশীল গাছের সংখ্যা প্রায় ৫৮ হাজার। মহাসড়কের দুই পাশ ঘেঁষে চা-বাগান এলাকা থেকে উত্তরে জোয়ারিয়ানালার মালাপাড়া,পূর্বে জুমছড়ি, গর্জনিয়া, দক্ষিণে লট উখিয়ার ঘোনা পর্যন্ত বর্তমানে বাগানের অবস্থান। বাগানের গাছগুলোতে ঝুলছে ছোট ছোট কালো ও নীল রঙের প্লাস্টিকের পাত্র। গাছের কাটা অংশ দিয়ে সেই পাত্রে চুইয়ে পড়ছে সাদা ধবধবে কষ। আর জমা হওয়া কষগুলো সংগ্রহ করে কারখানায় নিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। রামু রাবারবাগানের ব্যবস্থাপক নন্দি গোপাল রায় জানান, মূলত সারা বছরই রাবার উত্পাদন হয়। তবে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাস পর্যন্ত উৎপাদনের ভরা মৌসুম।
মৌসুমে প্রতিদিন রাবারবাগান থেকে ৫ হাজার কেজি কষ আহরণ করা হয়। শীতে আহরণ বেশি হয়। বর্ষায় উত্পাদন কমে আসে। রামু রাবারবাগান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আবছার মিয়া জানান, এসব কষ আহরণে নিয়মিত-অনিয়মিত ২০০ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। বাগান থেকে সাদা কষ সংগ্রহের পর সাত দিনের মধ্যে তা প্রক্রিয়াজাত করে শুকনা রাবারে পরিণত করা হয়। এভাবে প্রতি বছরে ২২০ টন শুকনা রাবার উত্পাদন হচ্ছে। কুমিল্লা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা রুবেল হোসেন বলেন, উঁচু-নিচু পাহাড়ের মাঝে সারি সারি রাবার গাছের বাগানে ঢুকলে মন হারিয়ে যাবে সবুজের সমারোহে। এ এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর সৌন্দর্য। দেশের নানা প্রান্ত থেকেও পর্যটক এসেছে রাবার বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। পরিবার নিয়ে ঘোরার উপযুক্ত যায়গা। খুব ভালো লাগছে। রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল বলেন, বাগানটি বর্তমানে স্বায়ত্তশাসিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে উঠবে বাগানটি।