মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

গাজায় নৃশংসতা

হাসপাতালে নেই অক্সিজেন, আইসিইউতে প্রাণ হারাচ্ছে রোগীরা

আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৩:২৫

গাজার সবচেয়ে বড় আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান চলছে। হাসপাতালের পানি ও বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছে সেনাবাহিনী। এর ফলে অক্সিজেনের অভাবে আইসিইউতে থাকা ২২ রোগীর সবার মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে এই নৃশংস অভিযানের তদন্ত দাবি করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা।

হাসপাতালে অবস্থান করা ব্যক্তিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। নেতানিয়াহুর বাহিনী জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পে আবারও হামলা চালিয়েছে। এতে ১৮ জন নিহত হয়েছে। বেসামরিক নাগরিকের নিহত কমানোর চেষ্টায় ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন ইসরায়েলির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও।

আল-শিফা হাসপাতালের সবশেষ অবস্থা

হাসপাতালটির পরিচালক মুহাম্মদ আবু সালমিয়া জানিয়েছেন, আল-শিফার অবস্থা ‘ভয়াবহ’, যেখানে এখনো ৬৫০ রোগী, ৫০০ চিকিত্সা কর্মকর্তা এবং ৫ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ অবস্থান করছে। গত বুধবার থেকে সেখানে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী এবং বৃহস্পতিবার তারা সেখানে হামাসের টানেলের একটি সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়ার দাবি করে। একই সঙ্গে অস্ত্র বোঝাই একটি গাড়ি পাওয়ার কথাও জানায় তারা।

হাসপাতালটির পরিচালক জানান, ইসরায়েলি সেনারা হাসপাতালটির প্রধান পানির সংযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছে। অভিযান চলছে। কেউ এক ভবন থেকে আরেক ভবনে যেতে পারছে না। আমরা আমাদের সহকর্মীদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না। রেডক্রিসেন্টের একটি দলও হাসপাতালে আটকা পড়েছে।

পরিচালক বলেন, হাসপাতালটি এখন বড় কারাগারে পরিণত হয়েছে। পানি, বিদ্যুত্ ও খাবার নেই। প্রতি মিনিটেই আমরা কাউকে না কাউকে হারাচ্ছি। গত রাতে আমরা ২২ জনকে হারিয়েছি। অক্সিজেনের অভাবে তারা আইসিইউতেই মারা গেছেন। তিনি জানান, তিন দিন ধরে হাসপাতালটি ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। উপরে ড্রোন উড়ছে। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে পুরো মেডিক্যাল কমপ্লেক্সটির দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথে একটি অংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে সেনারা। হাসপাতালের ভেতরে আটকে পড়া একজন সাংবাদিক বিবিসির রুশদি আবু আলৌফকে ফোনে জানিয়েছেন যে ‘ইসরায়েলি সৈন্যদের সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে এবং তারা সব দিক থেকে গুলি করছে’। তবে বিবিসি নিরপেক্ষভাবে এর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

এদিকে ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের সৈন্যরা গাজায় এক জিম্মির মৃতদেহ পেয়েছে। ৬৫ বছর বয়সি ইয়েহুডিত ওয়েইসকে গত সাতই অক্টোবর অপহরণ করে নিয়ে এসেছিল সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আল-শিফা হাসপাতাল সংলগ্ন একটি জায়গা থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

শরণার্থী শিবিরে আবার হামলা

গাজা উপত্যকার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। গতকাল শুক্রবার ছিল গাজায় ইসরায়েল আগ্রাসনের ৪২তম দিন। এদিন উত্তর গাজায় জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে পঞ্চম বারের মতো বড় ধরনের হামলা চালানো হয়।

ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা নিউজ জানায়, গতকাল (শুক্রবার) সকালে কয়েকটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল সেনারা। এতে এখন পর্যন্ত ১৮ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। গত মাসে গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই শরণার্থী শিবিরগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। চলতি মাসের শুরুর দিকে টানা তিন দিন জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পে হামলা চালায় ইসরায়েল বিমানবাহিনী। ঐ হামলায় শিবিরের বহু ভবন বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৯৫ জন নিহত ও ১২০ জন নিখোঁজ ছিল বলে জানিয়েছিল ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর গত ১৪ নভেম্বর জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ঐ দিন অন্তত ৩১ জন নিহত হয়। আহত হয় আরো বহু ফিলিস্তিনি। এদিকে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, তারা ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে প্রস্তুত।

গাজায় মাহাথিরের হাসপাতাল ধ্বংস

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ গাজায় তার প্রতিষ্ঠিত চিকিত্সাকেন্দ্র ধ্বংসের অভিযোগ করেছেন। গতকাল মাহাথির তার এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে জানান, তার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠিত একটি চিকিত্সাকেন্দ্র ইসরায়েলি বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ২০১৯ সালে পেরদানা গ্লোবাল পিস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গাজার অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জন্য হাসপাতালটি স্থাপন করেন।

শুক্রবার তিনি জানান, এই মাসের শুরুতে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের ডা. সিতি হাসমাহ এবং এনায়া ফিজিওথেরাপি সেন্টারটি ধ্বংস করা হয়েছে। তিনি বলেন, দক্ষিণে গাজার খান ইউনিসে চিকিত্সাকেন্দ্রটি হামলার কোনো কারণ ছিল না।

ইত্তেফাক/এসকে