২০ নভেম্বর পালিত হয়েছে বিশ্ব শিশু দিবস। তারই সূত্র ধরে বাংলাদেশের জাতীয় নেতাদের প্রতি শিশুদের জন্য পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যকর ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকাল সোমবার ইউনিসেফ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এক লিখিত বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়—জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে শিশুদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের বার্ষিক জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন ‘কপ২৮’। এর প্রাক্কালে শিশুদের জন্য জলবায়ুশিক্ষা, পানি ও স্যানিটেশন পরিষেবায় বিনিয়োগের গুরুত্ব এবং তাদের জীবনকে প্রভাবিত করে এধরনের জলবায়ুসংকটের সমাধান খুঁজতে তাদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানায় সংস্থাকে। সম্প্রতি ইউনিসেফের আয়োজনে এক আলোচনাসভায় শিশুদের পক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে নায়ের হক বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা ও ভারী বৃষ্টির কবলে প্রিয়জনদের হারিয়েছি এবং এর মানসিক ও শারীরিক বিপর্যয় শিশুদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় শিশুদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।’
ইউনিসেফ বাংলাদেশ শিশুদের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রথম শিশুদের জলবায়ু সম্মেলন বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি শিশুকে সম্পৃক্ত করে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে একটি জলবায়ু ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করে, যার ধারাবাহিকতায় শিশুদের একটি প্রতিনিধিত্বকারী দলের পক্ষে ইউনিসেফ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার কার্যালয়ে শিশুদের জলবায়ু ঘোষণাপত্রের একটি সংশোধিত সংস্করণ পাঠিয়েছে। হালনাগাদ ঘোষণাটি এসেছে বাংলাদেশের আটটি বিভাগের প্রতিনিধিত্বকারী ৩৫ জন শিশুর সঙ্গে ইউনিসেফ-সমর্থিত সহযোগিতামূলক এক আলোচনা সভা থেকে। ‘কপ২৮’-এর আগে জোর দিয়ে বলেছে, সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং ‘কপ২৮’-এ প্রতিনিধিত্বকারী দেশের প্রতিনিধিদলের উচিত একটি পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যকর ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া।
সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এমপি বলেন, জলবায়ুসংকটে বাংলাদেশের শিশুরাই সবচেয়ে মূল্যবান অংশীজন। শুধু শিশু-কেন্দ্রিক জলবায়ু নীতিমালার প্রতি প্রতিশ্রুতির কথা বললেই হবে না, সক্রিয়ভাবে তা বাস্তবায়নও করতে হবে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, বাংলাদেশের শিশুরা জলবায়ুসংকট এবং একটি নিরাপদ স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেঁচে থাকার ও বিকশিত হওয়ার অধিকার লঙ্ঘনের দ্বৈত চ্যালেঞ্জের মুখে, যার স্বীকৃতি দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশু ও তরুণরা যাতে তাদের ভবিষ্যৎ গঠনের কার্যক্রমে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করে তাদের কথা জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারে, সে বিষয়ে ইউনিসেফ প্রতিশ্রুতিতে অটল রয়েছে।
উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের মধ্যে বাংলাদেশের শিশুরাও রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি তিন জন শিশুর মধ্যে এক জন মারাত্মকভাবে জলবায়ুঝুঁকির মুখে রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫০ লাখ শিশুর বয়স পাঁচ বছরের কম। ১ কোটি ২০ লাখ শিশু বন্যাপ্রবণ এলাকার কাছাকাছি বাস করে এবং উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারী ৪৫ লাখ শিশু তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।