মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

হলফনামা বিশ্লেষণ

কক্সবাজারে এমপিদের সঙ্গে স্ত্রীদের সম্পদও বেড়েছে

আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৩৩

বিগত ৫ বছরে কক্সবাজারে ৪ এমপির সম্পদ কয়েকগুণ বেড়েছে। তাদের সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীদের সম্পদও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এবার কক্সবাজার-১ আসনের জাফর আলম ছাড়া বাকি ৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যরা দলের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বর্তমান এমপি জাফর আলম।

ইসিতে দাখিল হওয়া হলফনামা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৫ বছরে এমপিদের সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ। গত নির্বাচনে তাদের হলফনামায় প্রদত্ত সম্পদ বিবরণী ও আগামী নির্বাচনে প্রদত্ত হলফনামা থেকে সম্পদের এই পার্থক্য উঠে এসেছে।

তবে সবচেয়ে বেশি সম্পদ বেড়েছে কক্সবাজার-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত সংসদ সদস্য জাফর আলম ও তার স্ত্রীর। যদিও এর মধ্যে বেশির ভাগই গোপন করেছেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে জাফর আলমের বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। তখন তার নগদ অর্থ ও ব্যাংক জমাসহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিলো ৫৬ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ টাকা। কৃষি ও অকৃষি জমিসহ তার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৫০ টাকা। এছাড়া তার চিংড়ি খামারের ২০ একর জমি ছিলো যার বাৎসরিক খাজনা ৪০ হাজার টাকা। সেই হিসাব অনুযায়ী নিট সম্পদের মূল্যমান ছিল ১ কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকা। স্ত্রীর স্বণালঙ্কারসহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩১ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা ও স্থাবর সম্পদ ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নিট সম্পদের মূল্যমান ৬১ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা।

এদিকে আগামী নির্বাচনের হলফনামার তথ্য বলছে, তার বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ ১ কোটি ৫৪ লাখ ৬ হাজার ৪৭৬ টাকা। বর্তমানে তার নগদ অর্থ ও ব্যাংক জমাসহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ২৪৮ টাকা। কৃষি ও অকৃষি জমিসহ তার বর্তমান স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৮৭ টাকা। সব মিলিয়ে তার এবারের সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ৩০ লাখ ৮৬ হাজার ১১১ টাকা। এতে গত ৫ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৯৫ হাজার ১৫৯ টাকা।

তার স্ত্রীর বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১৭ লাখ ১৩ হাজার ১৩৩ টাকা। স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৭৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫০১ টাকা ও স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৫ হাজার ৭৫৩ টাকা। গত ৫ বছরে স্ত্রীর নিট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৮৭ টাকা। ৫ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ২ কোটি ২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮৭ টাকা।

এছাড়া এবারের হলফনামায় ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার যৌথ মালিকানাধীন সম্পদ দেখানো হয়েছে।

আবার হলফনামায় সস্ত্রীক এমপি জাফর আলমের নামে আরও শত কোটি টাকার সম্পদের হিসাব গোপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের সম্পদ বাড়ার পরিমাণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। পাশাপাশি স্বামীর চেয়ে স্কুল শিক্ষক স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ বেশি হওয়ায় জেলা জুড়ে গুঞ্জন চলছে। এর আগে তাদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কক্সবাজার কার্যালয়ে তাদের পুরো পরিবারকে তলব করা হয়েছিল।

দুদক সূত্র জানায়, এমপি জাফর আলম ও তার স্ত্রীসহ সন্তানদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে করা অনুসন্ধানে দুই শতাধিক দলিলের বেশির ভাগই সত্যতা মিলেছে। তবে এসব দলিলের বেশির ভাগই এমপি জাফরের মালিকানায় রয়েছে জানানো হয়েছে।

কিন্তু অনুসন্ধান শেষ না হওয়ায় এখনো দুদক কক্সবাজার কার্যলয় থেকে ঢাকায় প্রতিবেদন জমা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন।

জানতে চাইলে হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের বিষয়ে এমপি জাফর আলম বলেন, ‘আমি জায়গাজমির ব্যবসা করি, অনেক জমি কিনে সেটা আবার বিক্রি করে দিয়েছি। তাই যেসব জমি বিক্রি করেছি সেটা হলফনামায় তুলে ধরিনি। তবে আমার সম্পদের পরিমাণ আয়কর বিবরণীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রয়েছে।’

হলফনামায় সম্পদ ও নগদ অর্থ বাড়ানোর বিষয়ে জাফর আলম বলেন, ‘মাত্র ৪৪ লাখ টাকায় জমি কেনে এসআলম গ্রুপের কাছে ৩ কোটি টাকায় বিক্রি করেছি। আমার আগের জমিজমার দামও বেড়েছে। এ কারণে স্বাভাবিকভাবে চেয়ে আয়ও বেড়েছে।’

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে গত নিবার্চনে আশেক উল্লাহ রফিকের বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ২১ হাজার ২৭৮ টাকা। তখন তার নগদ অর্থসহ অস্থাবর সম্পদের মূল্যমান ধরা হয় ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০৪ টাকা। গাড়ি-বাড়ি ও কৃষি জমির মূল্য ও ৩ দশমিক ১৯ একর অকৃষি জমিসহ তার স্থাবর সম্পদের মূল্যমান ছিল ২৮ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬০ টাকা। সেই হিসাব অনুযায়ী তার নিট সম্পদের মূল্যমান ৩ কোটি ৮০ লাখ ৭৯ হাজার ৬৪২ টাকা। তার স্ত্রীর ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার দেখানো হয়েছিল।

অন্যদিকে আগামী নির্বাচনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী তার বাৎসরিক আয় দেখানো হয় ৪৭ লাখ ৭২ হাজার ৩৩২ টাকা। বর্তমানে তার নগদ অর্থ ও মূলধনসহ অস্থাবর সম্পদের মূল্যমান দেখানো হয় ৫ কোটি ১১ লাখ ৯৮ হাজার ৪৩৫ টাকা। গাড়ি-বাড়ি এবং কৃষি ও অকৃষি জমিসহ তার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ১১ লাখ ৪৯ হাজার ২৬২ টাকা। ৬ কোটি ৭১ লাখ ২০ হাজার ১৯ টাকা। এতে গত ৫ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ ৪০ হাজার ৩৭৭ টাকার। গতবারের মতোই তার স্ত্রীর ৩০ ভরি স্বণালঙ্কার দেখানো হয়েছে।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) গত নির্বাচনে সাইমুম সরওয়ার কমলের বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ ছিল ৪১ লাখ ৯২ হাজার ৪ শত ৬৩ টাকা। সে সময় তার নগদ অর্থসহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৭৪ লাখ ৫ হাজার টাকা। গাড়ি-বাড়িসহ তার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫৬০ টাকা। এই হিসাব অনুযায়ী তার নিট সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ১০ লাখ ৭৪ হাজার ২৩ টাকা। স্ত্রীর আয় ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৮৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৩ টাকা।

আর আগামী নিবার্চনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী তার বাৎসরিক আয় দেখানো হয় ৫১ লাখ ১৫ হাজার ২৮৮ টাকা। বর্তমান অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ২ কোটি ১৪ লাখ ২১ হাজার ২৮০ টাকা। গাড়ি-বাড়িসহ স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৬৮ লাখ ২ হাজার ৯৬০ টাকা। এই হিসাব অনুযায়ী নিট সম্পদের মূল্যমান দাঁড়ায় ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫২৮ টাকা। ৫ বছরে তার আয় বেড়েছে ২ কোটি ২২ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৫ টাকা।

এবারে স্ত্রীর আয় দেখানো হয়েছে ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৬৫ টাকা। বর্তমানে তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ৭৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯১৯ টাকা ও স্থাবর সম্পদের মূল্যমান দেখানো হয়েছে ৩০ লাখ ৭৫০ টাকা। এই হিসাব অনুযায়ী স্ত্রীর নিট সম্পদ ৪ কোটি ২৭ লাখ ২৬ হাজার ১৩৪ টাকা। যা গত ৫ বছরের তুলনায় ২ কোটি ৪২ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫১ টাকা।

কক্সবাজার-৪ আসনে গত নির্বাচনে শাহীন আক্তারের বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭১ হাজার ৮০৫ টাকা। তখন তার নগদ অর্থসহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। কৃষি জমি ও দালান বাড়িসহ তার স্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য ছিল ১২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। নিট সম্পদের পরিমাণ ২৩ লাখ ১২ হাজার ৮০৫ টাকা।

এদিকে, তার স্বামী আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির অস্থাবর সম্পদের মূল্যমান দেখানো হয়েছিল ২ কোটি ৫৯ লাখ ৩৪ হাজার ৬১২ টাকা ও স্থাবর সম্পদের মূল্যমান দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার ৬১৪ টাকা। নিট সম্পদ ৭ কোটি ১৬ লাখ ২৬ হাজার ২২৬ টাকা।

আর আগামী নিবার্চনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী শাহীন আকতারের বাৎসরিক আয়ের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৬৯৭ টাকা। নগদ টাকা ও স্বণালঙ্কারসহ তার বর্তমান অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ৩৬ লাখ ৬১ হাজার ৯৩২ টাকা। কৃষি ও অকৃষি জমিসহ তার স্থাবর সম্পদের মূল্যমান দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এতে নিট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় এক কোটি ৬৯ লাখ ২৮ হাজার ৬২৯ টাকা। গত ৫ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ টাকা।

এছাড়ও এবারে তার স্বামী আব্দুর রহমান বদির স্থাবর ও অস্থাবর মিলে মোট সম্পদের মূল্যমান দেখানো হয় ৯ কোটি ৭৮ লাখ ৯৭ হাজার ১৭৩ টাকা। যা গতবারের তুলনায় ২ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ৯৪৭ টাকা।

ইত্তেফাক/এইচএ