শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

দীর্ঘদিন পর মুনাফার নাগাল পেলেন বেড়ার পেঁয়াজচাষিরা

আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:২৯

কয়েক বছর ধরেই আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ চাষে লোকসান দিচ্ছিলেন পাবনার বেড়া উপজেলার চাষিরা। অবশেষে লোকসান থেকে বেরিয়ে ভালো লাভের দেখা পেয়েছেন কৃষকেরা। এতে শুধু কৃষকই নন, পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে খুশির আমেজ। কৃষকেরা মনের আনন্দে খেত থেকে নতুন পেঁয়াজ তুলে পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে হাটে তুলছেন।

বেড়া উপজেলা দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উত্পাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত। আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ উত্পাদনে বেড়া উপজেলা অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। বেড়া উপজেলায় ১ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা ও ২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে হালি মিলিয়ে ৪ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উপজেলাতে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ এখন কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করেছে। অন্যদিকে সপ্তাহ দুয়েক হলো কৃষকেরা জমিতে হালি পেঁয়াজ লাগানো শুরু করেছেন।

কৃষকেরা জানান, সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে ওঠা শুরু করে। জানুয়ারি মাস জুড়ে এই জাতের পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠতে থাকে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ ওঠা শেষ হতে না হতেই কৃষকের ঘরে হালি পেঁয়াজ ওঠা শুরু করে। গত তিন থেকে চার বছর ধরে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ আবাদে কৃষকেরা লোকসান দিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যে গত বছর (২০২২) নতুন পেঁয়াজ হাটে তুলে কৃষকেরা ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। অথচ তাদের উত্পাদনখরচ ছিল কেজিতে ৩০ টাকা। এবারও কৃষকেরা লোকসানের শঙ্কা নিয়ে পেঁয়াজ আবাদ করেছিলেন। এবার কৃষকের উত্পাদনখরচ পড়েছে প্রতি কেজি ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা। তবে গতবারের চেয়ে এবার উত্পাদনখরচ বাড়লেও কৃষকদের গতবারের মতো লোকসান দিতে হচ্ছে না। বাজারে কৃষকেরা প্রতি কেজি ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকায় নতুন পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। এতে কৃষকের প্রতি কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাভ হচ্ছে। এমন লাভে উপজেলার প্রত্যেক পেঁয়াজচাষির মুখেই হাসি ফুটেছে।

বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়নের রামনারায়ণপুর গ্রামের পেঁয়াজচাষি সাবদার মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় জমি থেকে নতুন পেঁয়াজ তুলে উঠানে এনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। পরে দুই-এক দিন সেগুলো রোদে দিয়ে বাজারে তোলা হবে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পেঁয়াজ পরিষ্কার করছেন। বাড়ির কিষানি লাইলি খাতুন বলেন, ‘গত বছর পেঁয়াজের আবাদ করে আমাদের লস হইছিল। কিন্তু এবার দাম ও ফলন দুই-ই ভালো হইছে। তাই আমাদের বাড়ির সবার মনেই এবার আনন্দ।’

একই ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের পেঁয়াজের খেতে পেঁয়াজ তুলছিলেন পেঁয়াজচাষি আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধইর্যা দেখছি পেঁয়াজ ওঠার সময় আসলেই পেঁয়াজের দাম কমে যায়। কিন্তু এবার তা না হয়া দাম ভালোই আছে। এই সময় দাম ভালো থাকলে কৃষকের লাভ। আর অন্য সময় ভালো থাকলে মজুতদারের লাভ।’ বেড়া পৌর এলাকার করমজা চতুরহাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর নতুন পেঁয়াজের আমদানি হয়েছে। হাটে এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে (পাইকারি) ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে। হাটের পেঁয়াজের আড়তদার রাজা হোসেন বলেন, ‘পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় কৃষক এবার ভালো দাম পাচ্ছে। হাটে নতুন পেঁয়াজের আমদানিও হচ্ছে প্রচুর। গত বছর এই সময় পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষক কেঁদে বাড়ি ফিরেছেন অথচ এবার খুব আনন্দ নিয়ে তারা বাড়ি ফিরছেন।’ 

বেড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইউসুফ আলী জানান, ভালো দাম দেখে কৃষকেরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। শেষ পর্যন্ত তারা ভালো দামও পাচ্ছেন। এমন দাম পেলে ভবিষ্যতে কৃষকেরা আরো বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদে উত্সাহ পাবেন।

ইত্তেফাক/এসটিএম