সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

‘ক্ষমতাসীনদের স্পর্শকাতর তথ্যের জন্য সাগর-রুনি হত্যার বিচার হচ্ছে না’

আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:৩৪

ক্ষমতাসীনদের স্পর্শকাতর তথ্য-প্রমাণ সাগর-রুনির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় উঠে আসায় তাদের হত্যার বিচার হচ্ছে না বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, গত ১২ বছরেও নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার কারণ হয়তো এই যে, সাগর-রুনির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এমন কিছু তথ্য-প্রমাণ উঠে এসেছিলো এবং তারা এমন কিছু বিষয় জেনে ফেলেছিলেন, যা ক্ষমতাসীনদের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও হুমকিস্বরূপ।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের এক যুগ আজ পেরিয়ে গেলো। অথচ আজও তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলো না। খুনিদের শনাক্ত করা হলো না। বিচারের ন্যূনতম উদ্যোগ নেওয়া হলো না। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা এই স্বেচ্ছাচারী রহস্য উন্মোচনের দাবি জানাই, সাগর-রুনি হত্যার বিচার চাই। আমরা চাই, প্রত্যেক সাংবাদিকের নিরাপত্তা, তাদের পেশাগত স্বাধীনতা।

প্রকৃত তদন্তের বিষয়টি রহস্যজনকভাবে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের একযুগ পূর্ণ হলো। এটি অত্যন্ত পীড়াদায়ক যে, এক যুগেও এই বহুল আলোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত তদন্ত করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হত্যার পর সাগর-রুনির খুনিরা বাসা থেকে ল্যাপটপ নিয়ে যায়। অথচ সেই ল্যাপটপ ১২ বছরেও উদ্ধার হয়নি। ঠিক যেমন উন্মোচন হয়নি, সেই ল্যাপটপে কী গোপনীয় বিষয় ছিল, তার কোনো তথ্য।

বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

সরকারের দুর্নীতি আড়াল করতেই সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত শেষ হচ্ছে না দাবি করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, হয়তো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের রাষ্ট্রীয় মদদে লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ ছিল তাদের কাছে, সেই খাতের লুটপাট তথা নেপথ্যেও কুশীলবদের সঙ্গে এই হত্যা ও বিচারহীনতার সম্পর্ক থাকা অস্বাভাবিক নয়।

১০৫ বার তদন্ত প্রতিবেদন পেছানো আওয়ামী লীগের নতুন বিশ্ব রেকর্ড উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্নীতি-দুঃশাসন-দুর্বৃত্তায়নে আওয়ামী লীগের বহুমাত্রিক বিশ্ব রেকর্ডের মাঝে, একটি হত্যা মামলায় ১০৫ বার তদন্ত প্রতিবেদন পেছানোও দৃষ্টান্তহীন আরেকটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড।

সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের প্রতিবেদন উল্লেখ করে রিজভী জানান, সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী- ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৮৯০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে, সর্বোচ্চ ১৩.৬৮ শতাংশ মামলা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন ক্ষমতা-সংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষী মহল।

সাংবাদিক নির্যাতনের জন্য যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী, তারা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি বা প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সে কারণেই তারা বিচারের আওতামুক্ত থাকে। আওয়ামী আইন ও বিচার এদের স্পর্শ করতে পারে না। এভাবেই দেশে তৈরি করা হয়েছে এক নৈরাজ্যময় ভীতিকর পরিবেশ, বলেন বিএনপির এই নেতা।

ইত্তেফাক/এবি