বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১
The Daily Ittefaq

প্রজনন মৌসুমেও সুন্দরবনে নিধন হচ্ছে মা-কাঁকড়া

আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:১৫

প্রজনন মৌসুমেও সুন্দরবনে নিধন হচ্ছে ডিমওয়ালা মা-কাঁকড়া। অসাধু জেলেরা মাছের পাশ নিয়ে বনের বিভিন্ন নদী ও খালে বহাল তবিয়তে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা পাশ পারমিট বন্ধ রাখার নির্দেশনা শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থাকছে। প্রতি মৌসুমে এভাবে চলতে থাকলে চিংড়ির চেয়েও অর্থনৈতিক কারণে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক এই সম্পদ অচিরেই বিলুপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস মা-কাঁকড়ার প্রধান প্রজনন মৌসুম। এসময়ে সরকারিভাবে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার পাশ পারমিট বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এই দুই মাসে মেদি-মায়া কাঁকড়া কোটি কোটি বাচ্চা ছাড়ে। আর বনের উপকূলীয় এলাকার হাজারো জেলে এই কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এছাড়া এই কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি করে ব্যবসায়ীরাও বছরে কোটি টাকা আয় করেন। কিন্তু সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের বিভিন্ন স্টেশনাধীন নদী ও খালে অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া নিধন চালিয়ে যাচ্ছেন অসাধু জেলেরা। নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা করছেন না তারা। আগে কাঁকড়ার দাম কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে ঢাকাসহ বড় মোকামে দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে বলে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে। অধিক লাভের আশায় শত শত জেলে মাছ ধরার পাশ পারমিট নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ মা কাঁকড়া আহরণ করছেন। আবার এসব কাঁকড়া হ্যাচারির বলে বিভিন্ন বাজারের ডিপোতে বিক্রি করছেন জেলেরা। মাঝে মধ্যে কাঁকড়ার দুই একটি চালান ধরা পড়লেও কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না মা কাঁকড়া নিধন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, একাধিক জেলের সঙ্গে আলাপকালে জানান, জেলেরা বিশেষ করে অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার গোনে মাছের পাশ নেয়। তারপর কাঁকড়া ধরার সরঞ্জাম নিয়ে বনের নদীতে নেমে পড়ে। এ বিষয়ে চুনকুড়ি এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য জীবননান্দ মণ্ডল বলেন, ‘প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা বন্ধ হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে চিংড়ির চেয়েও অর্থনৈতিক কারণে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক এই সম্পদ অচিরেই বিলুপ্ত হতে পারে।’ তিনি সরকারি এই সম্পদের ক্ষতি ও নষ্টের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানান।

এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. নুরুল করিম বলেন, ‘প্রজনন মৌসুমে বনে কাঁকড়া ধরা বন্ধ। এ সময়ে কোনো জেলেকে কাঁকড়া ধরা অবস্থায় পেলে গ্রেফতার করার নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তার পরও দুই একজন চুরি করে কাঁকড়া ধরতে পারেন। এ পর্যন্ত ছয় জেলেকে আটক করে জেলে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হয়েছে। ১২০ কেজি কাঁকড়া জব্দ করে অবমুক্ত করা হয়েছে। বেশ কয়েক জনকে জরিমানাও করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’

ইত্তেফাক/এসটিএম