যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির সামনে লুঙ্গি পরে চলাচল ও সালাম না দেওয়ায় এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের পর গুরুতর অসুস্থ ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যশোর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি ও হলের প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩০৮ নম্বর কক্ষে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. মাঞ্জুরুল হাসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
অপরদিকে অভিযুক্তরা হলেন যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা, ছাত্রলীগ কর্মী ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ফয়সাল আহমেদ, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ইসাদ হোসেন, আল আমিন, শেখ বিপুল হাসান ও মুশফিক, ফার্মেসি বিভাগের রাইসুল হক রানা। এদের মধ্যে সম্প্রতি ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলার দায়ে অভিযুক্ত ফয়সাল আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহিষ্কার করে। তারপরও তিনি ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় ছাত্রাবাসে অবস্থান করে আসছিলেন।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী জানান, শুক্রবার রাতে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানাকে সালাম না দেওয়া এবং লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় তার সামনে চলাচলের কারণে তাকে ডেকে ৩০৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে সভাপতি সোহেল রানার নির্দেশে বুকের ওপরে পা দিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করা হয়। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর চিৎকারে হলের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসলে অভিযুক্তরা হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
ভুক্তভোগী মাঞ্জুরুল হাসান বলেন, আমার দুই চোখেই সমস্যা। তেমন একটা দেখতে পাই না। রাতে আমি যখন লুঙ্গি পরে বাইরে যাচ্ছিলাম তখন ছাত্রলীগের সভাপতিসহ তার কর্মীরা আমার সামনেই পড়ে যায়। এরপর তারা ফিরে এসে আমাকে আমার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে ৩০৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে সেখানে সভাপতি সোহেল রানা আসে। তখন তার কাছে মাফ চাই।
এ সময় ওদের মধ্যে একজন বলেন, ভাইকে সালাম দিসনি না কেন? এই বলে আবার মারধর শুরু করে। তাদের বলেছি- ভাইকে (ছাত্রলীগের সভাপতি) দেখতে পাইনি আর লুঙ্গি উঁচু করে পড়েছি ময়লা লাগার ভয়ে। মারের একপর্যায়ে আমাকে তারা হুমকি দেয় এই ঘটনা কাউকে জানালে গুম করে ফেলবে, বলেন মাঞ্জুরুল।
অভিযোগ অস্বীকার করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, হলে কোনো শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়নি। রাতে কিছু ছেলে আমার রুমের সামনে জুনিয়রদের সঙ্গে চিৎকার করে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে তাদের বুঝিয়ে যার যার কক্ষে যেতে বলি। কাউকে মারা হয়নি আর যারা বিশৃঙ্খলা করছিল, তারা ছাত্রলীগের কোনো পদবীধারী কেউ না। ক্যাম্পাস রাজনীতির গ্রুপিংয়ের বলি হয়ে আমাকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মো. তানভীর ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাতে মারামারির ঘটনা শুনে আমি আমার সহকারী প্রভোস্টদের নিয়ে হলে আসি। এসে দেখি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে শনিবার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা প্রক্রিয়াধীন। তদন্ত শেষে অভিযুক্ত ও হলে অবস্থান করা বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর বিষয়েও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।