ঠাকুরগাঁওয়ে ভাড়াটিয়া বৃদ্ধ দম্পতিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বাড়ির মূল ফটকে চেয়ারম্যান তালা দেয়ার ঘটনার তিনদিন পর ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ওই বাড়ি পরিদর্শন করেছে সদর উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে পৌর এলাকার শান্তি নগর মহল্লায় ওই বাড়ি পরিদর্শন করেন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামান, পৌরসভার স্থানীয় সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর স্বপ্না আকতার। এ সময় সেখানে অভিযুক্ত জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, স্কুলশিক্ষিকা ফারহানা ইসলাম কলিসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ইউএনও অনেকের সঙ্গে কথা বললেও ওই বৃদ্ধ দম্পতির সঙ্গে কথা বলতে পারেননি এবং কোনো তালা তিনি উদ্ধার করতে পারেননি।
পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে ইউএনও জানান, তিনি এসে তালাবদ্ধ কোনো ঘর দেখেননি। সংবাদের সত্যতা যাচাই করার জন্য ভুক্তভোগী ওই দম্পতির সঙ্গে কথা বলতেও পারেননি তিনি। কারণ তাদের ওই স্থানে পাওয়া যায়নি।
তবে পরবর্তীতে মুঠোফোনে ভুক্তভোগী ভাড়াটে আব্দুল হালিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ইউএনও। এই কর্মকর্তা বলেন, এখানে এসে বৃদ্ধদম্পতিকে পাওয়া না গেলে আব্দুল হালিমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করি। তিনি জানান তিনি গাড়ি চালাচ্ছেন। তাকে পরবর্তীতে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে একঘণ্টা পর বৃদ্ধ আব্দুল হালিমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, ঘটনার তিন দিনেও আমাদের কেউ খোঁজ নেয়নি, দেখা করতে আসেনি। খেয়ে আছি, না মারা গেছি। তাই জীবিকার তাগিদে কাজে বের হয়েছি। ইউএনও যদি নারী কাউন্সিলরকে দিয়ে বার্তা পাঠাতেন আজকে তারা আসবেন আমি কাজে বের হতাম না। খবর নিলাম আমাদের বাড়ির ফটকটি এখনো তালা দেওয়া আছে। আর ভেতরে গতকাল থেকে চেয়ারম্যানের লোকজন অবস্থান করছিল। আমাদের মালপত্র সব ভেতরে।
এদিকে সংবাদ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে তালাবদ্ধ ফটকের পাশে বাড়ির বাইরে বেঞ্চে অবস্থান করছে বৃদ্ধ দম্পতি। সে তালাদুটি উদ্ধার করেনি বা চোখেও দেখেনি ইউএনও। তাহলে তালা গেল কোথায়, প্রশ্ন সচেতন মহলের?
সরেজমিনে দেখা যায়, ভাড়াটে বৃদ্ধ দম্পতি তালাবদ্ধ ফটকের বাইরে যে স্থানে অবস্থান করছিল সে ফটকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ অবস্থায় তালা ঝুলেছে। কেন সে তালা খোলা হয়নি এবং ইউএনও তাহলে কোন বাড়ি পরিদর্শন করলেন তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।
প্রকাশিত সংবাদের বরাতে সচেতন নাগরিক মাহাবুব আলম বলেন, বৃদ্ধ দম্পতির ভাষ্য ঘরের ভেতরে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে এবং তিন দিন ধরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না বৃদ্ধ দম্পতি। মূল ফটকে তালা দেওয়া হয়েছে। সেহেতু তাদেরকে জানিয়ে এখানে আসতে পারতেন প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বৃদ্ধ দম্পতির উপস্থিতিতে প্রশাসন ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা তালা খুলে বৃদ্ধ দম্পতির উপস্থিতে সত্যতা যাচাই করতে পারতেন। খুব দ্রুত প্রশাসনের বিষয়টি গভীরে খতিয়ে দেখা দরকার।
ভাড়াটে ওই দম্পতি চরম আতঙ্কে রয়েছে জানিয়ে বৃদ্ধ জোৎসনা বেগম বলেন, আমি সকাল থেকে বাড়ির সামনে বেঞ্চে বসে ছিলাম। দুপুরের দিকে কয়েকজন যুবক সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলছিল গতকাল আমি নাকি যা বলেছি সব মিথ্যা। আমাকে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করছিল। আমি এত করে বলছিলাম আমাদের বাড়ি থেকে বের করে চেয়ারম্যান তালা দিয়েছে ওই কতিপয় সাংবাদিক বারবার আমাকে চাপ দিচ্ছিল। আমি একপর্যায়ে বিরক্ত ও অসুস্থ হয়ে যাই। পরে আমাকে একটু দূরত্বে নিয়ে যায় আরও উল্টা প্রশ্ন করে। আমি ভয় পেয়ে ওখান থেকে দূরে সরে থাকি। ইউএনও সাহেব আসবে জানলে কোথাও যেতাম না।
সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মোছা স্বপ্না আকতার বলেন, আমি আজকেই প্রথম সেখানে পৌরসভার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গিয়েছি। এর আগে বৃদ্ধ দম্পতির ওখানে যাইনি। আমাকে ওভাবে কেউ কোনকিছু জানায়নি।
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন রিসিভ হয়নি।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি ফিরোজ ওয়াহিদ বলেন, বৃদ্ধ দম্পতির ঘটনায় বাড়িওয়ালা ফারহানা ইসলাম কলি বাদী হয়ে আজকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, আমি এখনো ভূক্তভোগীর সঙ্গে ওভাবে কথা বলতে পারিনি। আরও কথা বলে জেলা প্রশাসককে লিখিত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।