‘বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমার সোনা আমারে কল দিয়ে বলছে, মা আমার কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে আগুন লেগেছে। আমারে বাঁচাও। আমিও তারে (রকি) সান্ত্বনা দিলাম তোমার কিছু হবে না সোনা। দোয়া পড়ো সব ঠিক হয়ে যাবে। তার পরেও সে বলতো লাগলো, আম্মু আমি আর বাঁচবো না। তারপরে ফোন কেটে গেল আর কিছু শুনতে পারলাম না। আর কোনো কথাও হলো না। আমার সোনা আমারে না রেখে কিছু খেত না। এখন কি হবে সোনা। ও আল্লাহ তুমি আমার সোনারে ফিরিয়ে দাও...। আমার সোনার বদলে আমারে নিয়ে নাও....।’ এভাবেই বিলাপ করছিলেন কামরুল হাবিব রকির মা রিপা খাতুন।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের আগুন লাগার পর এভাবেই মোবাইল ফোনে মায়ের কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন নিহত কামরুল হাবিব রকি (২১)।
জানা যায়, দরিদ্র পরিবারে স্বপ্ন আর হাসিমুখে দুইমাস আগে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে চাকরি নেন রকি। দুইমাস পর তিনি বাড়িতে ফিরলেন দগ্ধ পোড়া লাশ হয়ে। রকির বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ধোপাখোলা গ্রামের কামারপাড়ায়। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তার লাশ পৌঁছায় গ্রামের বাড়িতে। তার মৃত্যু সংবাদে স্বজন, প্রতিবেশীরা ভিড় করে একনজর দেখার জন্য। তাদের আহাজারি, কান্নায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
শুক্রবার দুপুরে নিহত রকির গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার ধোপাখোলা কামার পাড়াতে গিয়ে দেখা গেছে, ছেলে হারানোর শোকে বিলাপ করছেন তার মা মা রিপা খাতুন। তিনি বলছেন, ‘আমার ছেলেটারে মাদ্রাসাতে পড়িয়েছি। নামাজ কালামের ওপর থাকতো। কত আদরের ছেলে ছিল। ও শোনা পাখি.....। তুমি (রকি) না বলেছিলে আমার ছাড়া থাকতে পারবা না। কেন তুমি আমারে ছেড়ে চলে গেলে। আমারে খুব ভালোবাসতো। আমি অসুস্থ হলে আমার সকল কাজে সহযোগিতা করতো।’
নিহত রকির ভাই কামরান হোসেন সাজিম বলেন, তার ভাই আলিম পাস করে গত ডিসেম্বর মাসে কাচ্চিভাই রেস্টুরেন্টে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি নেন। বৃহস্পতিবার সেখানে কর্মরত অবস্থায় আগুন লাগে। তিনি ভবনের ভিতরে আটকা পড়েন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান। আগুনের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়েই তার মৃত্য হয়েছে। শুক্রবার সকালে তার লাশ বাড়িতে পৌঁছায়।
‘আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে রকি সবার বড়। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে চাকরি করে সংসারের হাল ধরেছিল। বাবা ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালায়। তাদের দুজনের আয়ে আমাদের সংসার চলত। ভাইকে এভাবে হারাতে হবে কখনো কল্পনাই করিনি’, বলেন সাজিম।
নিহত রকির মামা জিহাদ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে রকির ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও কল দিয়েছি, সে রিসিভ করেনি। পরে আমাকে কল ব্যাক করে বাঁচানোর আকুতি জানায়। আমাকে বলে মামা আমাদের ব্রাঞ্চে ( কাচ্চিভাই বেইলি রোড শাখা) আগুন লাগছে। আমি আটকা পড়েছি। আমাকে বাঁচাও। কিছুক্ষণ পর কল কেটে যায়। আমি ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে বিষয়টি জানাই। তারা জানায়, উদ্ধার কাজ চলছে, ধৈর্য্য ধরুন। এরপর আমি ঢাকায় রওনা হই। সেখানে হাসপাতালে পাই রকিকে। ততক্ষণে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
তিনি বলেন, আমিই রকিকে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলাম। ওর চাকরির পর আমিই ঢাকা চিনিয়েছি। গত ডিসেম্বরে রকি চাকরিতে ঢুকেছে। আজ ওর লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।