বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
The Daily Ittefaq

ক্যাবরেরার কথায় ফুটবল কর্তাদের চোখে আগুনের আলপনা

আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৫:৪০

ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ম্যাচ হারের চেয়ে বাংলাদেশ ফুটবল দল কোথায় কোথায় ভুল করেছে তা নিয়ে ফুটবল অঙ্গনে রয়েছে সমালোচনা। ফুঁসছে বাফুফে। খেলোয়াড়রা মাঠে যতটা না ভুল করেছেন তার চেয়ে ভুল চোখে পড়েছে কোচের পরিকল্পনায়। স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা একের পর এক ভুল করছেন আর ভুগতে হচ্ছে দলকে। ২১ মার্চ কুয়েতের মাঠে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ৫-০ গোলে হারের মধ্যেও কোচের পরিকল্পনায় ভুল ছিল।

কোচ তার রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের নিজ নিজ পজিশনে না খেলিয়ে এক পজিশনের ফুটবলার অন্য পজিশনে খেলিয়েছেন। ভালো খেলতে থাকা দলটার রক্ষণে আচমকা ধস নামে। ৫ গোল হজম করতে খুব বেশি সময় লাগেনি সেদিন। ফিরতি ম্যাচে ঢাকায় ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ১-০ গোলে বাংলাদেশ হারলেও ৯৪ মিনিট পর্যন্ত ফিলিস্তিনের আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছে। গোলরক্ষক মিতুল মারমা অসুস্থ হয়ে মাঠ ছাড়েন ৮৪ মিনিটে। নামানো হয় তরুণ গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণকে। বাংলাদেশ তখন গোল করেওনি এবং হজমও করেনি।

ফিলিস্তিনি ৯ ফুটবলার রোজা রেখে খেলছে। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ বাঁচার লড়াই করছে। গোলরক্ষক মিতুল মারমা মাঠ ছাড়ার পর দলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনি ফুটবলঝড় ঠেকানোর জন্য অভিজ্ঞ গোলরক্ষক দরকার। অভিজ্ঞ গোলরক্ষক ছিল আনিসুর রহমান জিকো। তিনি সাফের সেরা গোলরক্ষক। দক্ষতা সম্পন্ন। ধরেই নেওয়া যায় ফিলিস্তিনের বিপক্ষে বিপজ্জনক মুহূর্তে জিকো মানিয়ে নিতে পারবেন। অন্তত অন্যদের চেয়ে জিকোর জন্য যেটা সহজতম হবে, সেটা অন্যদের জন্য মানিয়ে নেওয়ার কাজটা সহজ হবে না।

ম্যাচের সেই মুহূর্তে ডাগআউটে থাকা বাংলাদেশ দলের সবারই ধারণা ছিল এসব ক্ষেত্রে জিকোই অটোমেটিক চয়েজ। খোঁজ নিয়ে জানা যায় জিকো নিজেও মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নামতে হবে মনে করে। কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা গোলরক্ষক শ্রাবণকে নামতে বললেন। ১১ জনের ফিলিস্তিন গোল করতে না পারা ১০ জনের দল গোল করল। শ্রাবণ সহজেই গোল হজম করলেন। শ্রাবণ মাঠে নেমে তার রক্ষণভাগকে সংগঠিত করতে পারেননি। রক্ষণের গ্যাপগুলো সহজেই দেখতে পারেন গোলরক্ষক। শ্রাবণ সেভাবে অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে পারেননি। ফ্লাইট বুঝতে দেরি করেন। ম্যাচ রিড করার দক্ষতা হয়নি। দুর্ভাগ্য হলেও দক্ষ গোলরক্ষক থাকার পরও কোচ ক্যাবরেরা অনভিজ্ঞ শ্রাবণকে নামিয়ে জাতীয় দল নিয়ে ছেলে খেলা করছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উঠল গোলরক্ষক মিতুলের পরিবর্তে শ্রাবণ কেন? কেন জিকোকে নামানো হলো না? কোচ ক্যাবরেরার জবাব, 'শ্রাবণ দলের সেকেন্ড গোলরক্ষক।' তার মানে জিকো কিছুই না। কোচের এই কথা শুনে ফুটবল কর্মকর্তাদের চোখে আগুনের আলপনা। একজন কোচ কীভাবে এক কথা বলেন। সৌদি আরবে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করতে গিয় সুদানের বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ। সেখানেও ক্লাব ফুটবলে বেঞ্চের গোলরক্ষক শ্রাবণকে নামান কোচ। ফুটবল দলের ম্যানেজার আমের খান বলেন, 'কেন কোচ শ্রাবণকে নামাচ্ছেন আমিও জানি না।'

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনও জানিয়েছেন শ্রাবণ ভালো, সে তরুণ, এখনো অনেক সময় আছে। ম্যাচের পরিস্থিতি বলে দেয় কাকে কখন প্রয়োজন। এত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কেন কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কোচ। সেটা উনি ভালো বলতে পারবেন।' কোচ জাতীয় দলের ভাগ্য নিয়ে পুতুল খেলতে পারেন কি না। সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন আমরা ভেবে দেখব।' কুয়েতে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে রক্ষণভাগের ফুটবলার বিশ্বনাথকে স্টপার পজিশনে খেলিয়েছেন কোচ। রক্ষণের ফুটবলারদের পজিশন চেঞ্জ করিয়ে দিয়েছেন।

ফিলিস্তিনের বিপক্ষে মজিবর রহমান জনি খেলেছেন ৮৯ মিনিট। বাংলাদেশের ভালো ভালো আক্রমণ নষ্ট করেছেন জনি। একটা ভালো পাসও দিতে পারেননি বসুন্ধরা কিংসের এই ফুটবলার। জনির পায়ে বল গেলে হাত ছাড়া। এমন ফুটবলার বাংলাদেশ দলের একাদশে খেলেছেন ক্যাবরেরা কারণে। কোচ তাকে ৮৯ মিনিট রাখলেন। জনিকে বসিয়ে ইসা ফয়সালকে নামানোর পরই বাংলাদেশ গোলের চান্স করে ফেলেছিল। কেন কোচ জাতীয় দল নিয়ে এমন করছেন? এসব জবাব কে দেবে? সালাহউদ্দিন বললেন, 'এটার জবাব কোচ দিতে পারবেন। আমি তো কোচ না।'

২০০৩ সালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও কোচরা বেশি বেতন পাননি। আর গত বছর সাফের সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। তাতেই কোচ ক্যাবরেরা দ্বিগুণ বেতন দাবি করে বসেন। ভালো খেলেছিল বলে বাফুফে বেতন বাড়িয়েছিল।

ইত্তেফাক/জেডএইচ