আসছে ঈদ। দিনটিকে সামনে রেখে নতুন মার্কেটগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। পছন্দের পোশাক কিনতে মানুষের ব্যস্ততা ক্রমশ বাড়ছে। অন্যদিকে, একটি অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারানো কিছু মানুষ পোড়া ঘরের ভিটেতে বসে খুঁজছে একটু ঈদ আনন্দ।
ঠাকুরগাঁও সদরের আখানগর মধ্য ঝাড়গাঁ গ্রামে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে আগুন লাগে। এতে ৩১ পরিবারের ঘর পুড়ে যায়। এ ঘটনায় নিজেদের কাপড়, আসবাবপত্র, গবাদিপশু - সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই যেখানে ছাই হয়ে গেছে, সেখানে ঈদের আনন্দ আর কতোটুকুই অর্থবহন করে এই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কাছে?তবুও ছোট্ট শিশুর বায়না কী আর আগুন বুঝতে পারে? তবুও নতুন জামা চায় তাদের নিষ্পাপ চোখ। এ আবদার তাদের পাপ না হলেও, চাপ সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে পরিবারের অন্য সদস্যদের!
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো অনেকে এখনো ঘর নির্মাণ করতে পারেননি। একদিকে রমজানের খরচ জোগাতে হিমসিম অবস্থা। অন্যদিকে আসন্ন ঈদে নতুন জামাকাপড় ও অন্যান্য ঈদসামগ্রী এখনো কিনতে পারেননি। তাই ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ততোই নিজেদের অসহায়ত্ব ঘন হচ্ছে।
অগ্নিকাণ্ডে ঘর পুড়েছে নরসুন্দর মজিদের। ছোট্ট দুই সন্তান তার। রমজানে সেলুনে কাজ তেমন না থাকায় খরচ ঠিকঠাক যোগাতে পারেননি। সন্তানের নতুন কাপড়ের বায়না সামলাচ্ছেন স্বান্তনা দিয়েই। কারও কাছে কোনো চাওয়া নেই তাদের। তারা শুধু চায় একটু আনন্দ নিয়ে ধর্মীয় উৎসব পালন করতে।
দিনমজুর ইসলাম আলী ঘর পুড়ে যাওয়ায় নিজেও ভেঙে পড়েছেন। দুঃশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে। স্ত্রী-সন্তান আর বয়স্ক মা - কারও জন্য কিছু কিনতে পারেননি। মাথা গোঁজার ঠাঁই এখন তার প্রধান চাওয়া।
এক মা তার প্রতিবন্ধী সন্তানদের প্রত্যেক ঈদে নতুন কাপড় কিনে দেন। এ বছর কেনা হয়নি। ঘর পোড়ার কষ্ট তাকে যতটা কষ্ট দেয়নি, ঈদে সন্তানদের নতুন কাপড় কিনে দিতে না পারার আক্ষেপ তার আরও তীব্র। পোশাক চাই - এ কথাটি মুখে না বললেও ঈদে তার সন্তানদের দুটো নতুন জামা দিতে পারলে কলিজা ঠাণ্ডা হতো এতে কোনো সন্দেহ নেই।
জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ডের সময় সরকারের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা, খাবার ও কম্বল দেওয়া হয়েছিলো তাদের। এরপর নতুন ঘরের জন্য নামের তালিকা করা হয়েছে।
সাংবাদিকের গাড়ি দেখে সহজ-সরল এ মানুষগুলো ভেবেছিলেন সরকারের পক্ষ থেকে হয়তো ঘরের মালামাল ও ঈদ উপহার নিয়ে আসা হয়েছে। গাড়ির সামনে অনেকেই ভিড় করতে থাকেন। কথা বলার এক পর্যায়ে অনেকে বলেন, 'এবার আমাদের ঈদ বলতে কোনো অনুভূতি নেই। নিজেদের খুব সর্বহারা মনে হচ্ছে। নতুন কাপড়, খাদ্যসামগ্রীর চাওয়া আমাদের কতটুকু অধিকার জানি না। তবে আমাদের কাঁধে মানবতার হাত খুব দরকার।'
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেলায়েত হোসেন বলেন, তাদের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির জন্য আমি চেষ্টা করবো। এছাড়া শিগগিরই তাদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হবে।