নওগাঁর রাণীনগরে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বৈদ্যুতিক মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রেকর্ড সংখ্যক এমন চুরির ঘটনা ঘটেছে। চিরকুট লিখে বিকাশের মাধ্যমে লেনদেনের মতো অভিনব কায়দায় মিটার চুরির ঘটনায় উপজেলাবাসী শঙ্কিত।
জানা গেছে, গত ছয় মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩ ফেজের মিটার চুরি হয়েছে ৭টি যার মূল্য ১ লাখ ৪০ হাজার, ১০ কেভি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে ৭টি যার মূল্য ৬ লাখ ৬৯ হাজার ২ শত ৯৪ টাকা আর ৫ কেভি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে ৩টি যার মূল্য ১ লাখ ২২ হাজার ৯ শত ৬৫ টাকা।
গত ছয় মাসের মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৪টি মিটার ও ৬টি ১০ কেভি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এরপর গত বছরের নভেম্বর মাসে ৫ কেভির ৩টি ও ১০ কেভির ১টি ট্রান্সফরমার এবং ২টি মিটার চুরি হয়েছে। এমন ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গভীরনলকূপের সেচ গ্রাহকরা। এই চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রাহকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনিভাবে সরকারের লোকসান হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
উপজেলার মিরাট গ্রামের মৃত চাঁন আকন্দের ছেলে আব্দুর রহিম আকন্দ জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ রাতে তার গভীরনলকূপের ১০ কেভিএ ৩টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। চোরেরা ট্রান্সফরমারের ভেতরে থাকা মূল্যবান কোর ও কয়েল চুরি করে নিয়ে যায় যার মূল্য ২ লাখ ১ হাজার ৩ শত ৩০ টাকা। এই চুরির ঘটনা ঘটে অফ সিজনে। সেই সময়ে মাঠ শুকনো থাকে। সেই সময়ে গভীর নলকূপের ঘরে অধিকাংশ সময়ে কেউ থাকে না। এমন চুরির ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনরা চুরির সঙ্গে জড়িতদের কাউকে আটক কিংবা শনাক্ত করতে পারেনি। এমন চুরির কারণে আমাদের সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। আবার পূর্বে চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমার চুরি হলে সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেয়া হতো কিন্তু নতুন আইন অনুসারে ট্রান্সফরমার চুরি হলে তার সম্পূর্ণ অর্থ গ্রাহককে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমন আইনে আমরা গ্রাহকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
উপজেলার জগৎপুর গ্রামের রমজানের ছেলে শহিদুল ইসলাম বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখ রাতে মৎস্য খামারে থাকা ৩ ফেজের ১টি মিটার চোরেরা চিরকুট লিখে চুরি করে নিয়ে যায়। যে মিটারের মূল্য ১৪ হাজার ৯ শত ৮৫ টাকা। পরবর্তীতে চিরকুটে লেখা নম্বরে চোরদের চাহিদা মাফিক টাকা বিকাশ করার মাধ্যমে মিটারটি ফেরত পাওয়া গেছে। বর্তমান ডিজিটাল সময়ে যেখানে বিভিন্ন বাহিনী আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বড় বড় অপরাধীদের আটক করতে সক্ষম হচ্ছে অথচ মিটার চোরদের আটক করতে পারছে না। এটি অত্যন্ত দুঃখ্যজনক। মাঝখান থেকে আমরা যারা সুবিধাভোগী তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আর লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে। আমরা এমন চোর সিন্ডিকেটের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।
রাণীনগর থানার ওসি আবু ওবায়েদ জানান, মিটার চুরিসহ বিভিন্ন চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের আটক করার তৎপড়তা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি কয়েকজন সক্রিয় আন্তঃজেলা ডাকাতদলের সদস্যদের আটক করেছি। আগামীতেও পুলিশের এমন তৎপড়তা অব্যাহত থাকবে।
নওগাঁ পবিস-১ রাণীনগর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আকিয়াব হোসেন বলেন, চিরকুট লিখে মিটার চুরির ঘটনা নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া ও গাইবান্ধা জেলায় বেশি ঘটছে। দেশের অন্যান্য জায়গায় চিরকুট লিখে মিটার চুরির ঘটনা তেমন একটা শোনা যায় না। এমন চুরির ঘটনা প্রতিরোধ করতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে ট্রান্সফরমার পাহারা দেওয়ার জন্য গ্রাহকদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।